ইউনূস ম্যাজিকে বিশ্বময় বাংলাদেশ
মনোয়ারুল ইসলাম
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৩৩ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার
৩০ বছরে যা হয়নি তা হলো ২০২৪ সালে। জাতিসংঘ জুড়ে ড.ইউনূসের বাংলাদেশ। বিশ্ব পরিমন্ডলে ইউনূস ও বাংলাদেশ উচ্চতার শিখড়ে স্থান করে নিয়েছে। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বিশ্বে পরিচিতি পায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে ড. ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তির পর সারা দুনিয়ার মানুষ নতুন করে চেনে বাংলাদেশকে। সেই ইউনূস ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে জাতিসংঘের ৭৯তম অধিশেনে যোগ দিতে ২৩ সেপ্টেম্বর আসেন নিউইয়র্কে। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘে কর্মব্যস্ত দিন শুরু করেন। প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। জাতিসংঘে মার্কিন কোন প্রেসিডেন্টের সাথে বাংলাদেশের কোন সরকার প্রধানের সাথে এই ধরনের বৈঠক গত ৩০ বছরে ছিল বিরল। ২৪ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ৩ দিনে ২২ টি দেশ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রধান তার সাথে বৈঠক করেছেন। অতীতে বাংলাদেশের বেলায় এমন রেকর্ড নেই। সাবেক সরকার প্রধানরা জাতিসংঘে এসে বিভিন্ন সরকার প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করতে লবিং করতেন। জাতিসংঘস্থ বাংলাদেশ মিশন হন্যে হয়ে তদবির করতেন একটা সাক্ষাত বৈঠক আয়োজনের। এবার তার উল্টো। বিভিন্ন দেশ থেকে একের পর এক অনুরোধ আসতে থাকে ড. ইউনূসের সাথে বৈঠকের। তাও আবার উন্নত দেশগুলোর সরকার প্রধানদের কাছ থেকে। ডজনেরও বেশি অনুরোধ বাংলাদেশকে সবিনয়ে ফিরিয়ে দিতে হয় সময়ের অভাবে। প্রত্যেকদিন ন্যুনতম ১২টি ইভেন্টে ড. ইউনূসকে অংশ নিতে হয়েছে।
সাধারণত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অন্য দেশের সরকার প্রধানের সাক্ষাৎ ঘটে লবিতে। সেখানে তিনি কারো সাথে কোনো বৈঠকে মিলিত হন না। জাতিসংঘ সদর দফতরে বাইডেন-ইউনূস বৈঠক ছিল ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই বৈঠকে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন জো বাইডেন। ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের। সবচেয়ে বড় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বৈঠকটির অন্তরঙ্গতা। জো বাইডেন তাকে জড়িয়ে ধরে বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন বিরল আন্তরিকতার।
এ বৈঠক নিয়ে হোয়াইট হাউজ প্রকাশ করেছে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কারে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভসহ বিভিন্ন সংস্থার নেতৃবৃন্দের সাথে ড. ইউনূস।
জাতিসংঘের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তিনি বাংলাদেশ ও তার মানুষের কথা অকপটে তুলে ধরেন। পরিচয় করিয়েছেন তার সফরসঙ্গী গণঅভ্যুত্থানের সমন্বয়ক শিক্ষার্থীদেরকে। গত বুধবার জাতিসংঘ সদর দফতরে অভুতপূর্ব দৃশের সূচনা হয়। অল্প সময়ের জন্য সৌজন্য সাক্ষাত প্রদান করেন ড. ইউনূস। জাতিসংঘের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা লাইন ধরে তার সাথে সাক্ষাত করেন। ৭৯তম জাতিসংঘ অধিবেশন ছিল বাংলাদেশময়। সর্বত্রই ড. ইউনূস, বাংলদেশ ও জুলাই আগষ্টের ছাত্রজনতার আন্দোলনের প্রসংগ। সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসা একজন বিদেশিকে বলতে শোনা যায়, ম্যাজিকম্যান ড. ইউনূস।
এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ড. ইউনূসের নির্মোহ নেতৃত্ব দেশকে ইতোমধ্যেই পৌঁছে দিয়েছে বিশ্ব দরবারে নতুন এক উচ্চতায়।
ড. ইউনূসের সাথে যারা বৈঠক করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযেগ্যরা হলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা,পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সাহবাজ শরীফ, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন প্রধান ফলকার টুর্ক,জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) প্রশাসক সামান্থা পাওয়ার, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ইতালীর প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, আইএম এফ প্রধান ক্রিস্টিলিনা জর্জিভা, মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট (পররাষ্ট্র মন্ত্রী) এন্টনি ব্লিনকেন,জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যানটনিও গুতারেস,নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কফ, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টেও প্রসিকিউটর করিম এএ খান, মার্কিন প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর ডিক ডারবিন,জাতিসংঘ হাই কমিশন ফর রিফিউজি কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রানডি,আর্ন্তজাতিক লেবার সংস্থার মহাপরিচালক গিলবার্ট হাউংবো,ইউএনডিপি এডমিনিস্ট্রেটর একিম স্টেইনার।