রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতিসংঘে রাজত্ব করা ৫ রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৫৬ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার


সিকিউরিটি কাউন্সিল সংস্কার দাবি
 
 
জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে এবার ‘হট ডিবেট’ হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে ‘রিফর্মিং দ্য সিকিউরিটি কউন্সিল’। সদস্য রাষ্ট্রের প্রধানরা তাদের আলোচনায় ‘সিকিউরিটি কাউন্সিল’ সংস্কারের দাবি উঠিয়েছেন। বিশ্বের ১৯৩টি দেশ জাতিসংঘের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ৫টি দেশ মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে রাজত্ব করছে। ‘সিকিউরিটি কাউন্সিলে’র সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে তারা ‘ভেটো’ প্রয়োগের ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এই ৫টি দেশের ক্ষমতা নিয়ে এবার জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে তুমুল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে সদস্য অনেক রাষ্ট্র। এই ইস্যুটি এবারের অধিবেশেনে ‘সবচেয়ে হট’ ইস্যু হিসেবে দেখা হচ্ছে। সিকিউরিটি কাউন্সিলের স্থায়ি সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, ফ্্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্য।
জাতিসংঘে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোস গত ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর বক্তৃতায় সংস্কারের সূচনা করে বলেন, আমি জাতিসংঘের ‘সিকিউরিটি কাউন্সিল’ সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছর পরও ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে’র কাঠামো মূলত অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। তিনি আফ্রিকাকে কাউন্সিলের অংশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানান।
সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বায়ো আফ্রিকান দেশগুলির জন্য দুটি নতুন স্থায়ী সদস্যসহ ‘সিকিউরিটি কাউন্সিল’ সংস্কারের জন্য আফ্রিকার দাবির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবারের অধিবেশনে।
‘ভোটো’ প্রয়োগের বিষয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ যাতে জাতিসংঘের সদস্য না হতে পারে সে জন্য ১৯৭২ এবং ১৯৭৩ সালে চীন ‘ভেটো’ প্রয়োগ করেছিল পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে। ফলে দুই বছর বাংলাদেশ জাতিসংঘে সদস্য হতে পারেনি। ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে বাংলাদেশের সদস্য পদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হয়ে গেলো বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে।
বিতর্কে উঠে এসেছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামো মৌলিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে স্থায়ী আসন এবং ভেটো ক্ষমতা সম্পন্ন পাঁচটি দেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার শর্তাবলী নির্ধারণ করে। ‘পি ফাইভ’ নামে তাদেরকে ডাকা হয়। তারা কিভাবে ‘ভেটো’ প্রয়োগ করে বিশ্ব শান্তি বিনষ্ট করছে তার উদাহরণ  দেওয়া হয়।
সিকিউরিটি কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য দেশ রাশিয়া ‘ভেটো’ ক্ষমতার ঘন ঘন প্রয়োগ করেছে ইউক্রেন ইস্যুতে। ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া ‘ভেটো’ প্রয়োগ করে চলেছে। ফিলিস্তিন প্রশ্নে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র ‘ভেটো’ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে ১৬ বার। যুক্তরাষ্ট্র এবছর প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের সদস্য পদ দেওয়ার একটি প্রস্তাবকে ‘ভেটো’ দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে।
এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের পরিষ্কার বক্তব্য ছিল এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স) প্রযুক্তি, ক্লাইমেট ক্রাইসিস, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘আমরা যদি বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য (আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স) এআই-এর পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে চাই, তবে এই প্রযুক্তি প্রকৃতপক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।’
আলোচনাকালে বলা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছাই ভষ্ম থেকে শুরু করে বিশ্বের বেশিরভাগ অংশ তখন ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। তখন থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মাত্র পাঁচটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য আধিপত্য বিস্তার করে আছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা বা ক্যারিবিয়ানের কোনও দেশেরই স্থায়ী সদস্যদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ‘ভেটো ক্ষমতা’ নেই।
‘পি ফাইভ’  নামে পরিচিত সিকিউরিটি কাউন্সিলের স্থায়ী সদস্যরা জাতীয় স্বার্থ এবং বৈদেশিক নীতির সিদ্ধান্তে, শান্তিরক্ষা মিশন থেকে শুরু করে নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত যে কোনও প্রস্তাবকে ‘ভোটে’ দিয়ে থামিয়ে দিতে পারছে।
এবারের সাধারণ অধিবেশনে আলোচিত ‘সিকিউরিটি কাউন্সিল’ সংস্কারের দাবি হয়তো একদিন পূরণ হবে। তবে অপেক্ষা করতে হবে অনেকগুলো বছর। এমনটাই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।