রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪   আশ্বিন ২০ ১৪৩১   ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

ইউনূসের সংলাপে সংস্কারের টার্মস অব রেফারেন্সই প্রধান্য

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৩০ এএম, ৫ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার


#    আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল আউট
#    সারাদেশে উদ্বেগ উৎকন্ঠা


রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও সংলাপে বসছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার। এবারের এজেন্ডা সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কার্যপরিধি নির্ধারণ। পাশাপাশি, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় এ ব্যাপারে করনীয় দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। অর্ন্তবর্তি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংলাপের আহ্বান করেছেন। এর আগেও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। অর্ন্তভুক্তিমূলক সংস্কার করার লক্ষ্যে তিনি এই সংলাপ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া, এসব সংস্কার কর্মকান্ডকে পরবর্তি গণতান্ত্রিক সরকারের জাতীয় সংসদে পাশ করানোর প্রয়োজন হতে হবে। এসব কারণে রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সংস্কার করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সঙ্গে নিচ্ছেন ইউনূস। যদিও এবারের সংলাপেও আওয়ামী লীগকে ডাকা হচ্ছে না। সংস্কারের পর আগামী নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে এই আলোচনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক শোরগোলের মধ্যে এবারের সংলাপের ডাক দিলেন প্রধান উদেষ্টা। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে অর্ন্তবর্তি সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সেনাপ্রধান সংস্কারের ১৮ মাস পরে নির্বাচনের কথা বলেছেন। এসব নিয়ে তুমুল আলোচনা চারদিকে।

শনিবার ধারাবাহিকভাবে সংলাপ শুরু কবে। এতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এবারের সংলাপে সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হবে। এবারের সংলাপের আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না।  ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারে সুনির্দিষ্ট ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন অর্ন্তবর্তি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে কমিশন প্রধানদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদেও সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কতক্ষণ সংলাপ হবে এবং একদিনেই সবার সঙ্গে সংলাপ হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আলোচনার দিনই সংলাপের সময় বাড়ানো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, কমিশনের কাজ শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর। তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে যে কীভাবে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগেও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দুই দফায় আলোচনা করেছে অন্তর্র্বতী সরকার। অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার ৪ দিনের মাথায় ১২ ও ১৩ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরমধ্যে ছিল-বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) কয়েকটি দল ও জোট। এসব দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয়। ৩০ আগস্ট বিএনপির সঙ্গে আরেক দফা বৈঠক করেন ড. ইউনূস। এরপর ৩১ আগস্ট থেকে বৈঠক করেন এলডিপি, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন এবং ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে। এসব বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংস্কারে জোর দিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাকে ঘিরে তীব্র অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন মহলের দাবির মিছিল, পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের উত্তেজনা, সংখ্যালঘূ ইস্যু, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে ভারতে কটুক্তি, লেবাননে ইসরাইলি হামলা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে বেশ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোও চিন্তিত। সাধারন মানুষ উদ্বিগ্ন। কি হতে হতে যাচ্ছে? অর্ন্তবর্তী সরকার কি ব্যর্থ হবেন? কোন পথে যাচ্ছে দেশ?
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তি সরকার ক্ষমতায় যাবার পর থেকে বিভিন্ন পক্ষ দাবি নিয়ে বেশ সোচ্চার। তারা সচিবালয় ঘেরাও শুধু নয়। সচিবালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করছে। সম্প্রতি চাকুরির বয়স ৩৫ করার দাবিতে একটি পক্ষের বিক্ষোভের সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয়।
পোশাক শিল্পের শ্রমিকরাও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ করছে। আশুলিয়ায় তারা গাড়ি ভাংচুর ও কারখানায় অগ্নিসংযোগ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা হিসাবে গুলি করা হলে এক শ্রমিক মারা যায়।
ধর্মীয় উত্তেজনাও বেশ চাঙ্গা হয়েছে। দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে বিভিন্নস্থানে পূজায় বাধা দেয়া হয়েছে। কোনও কোনও স্থানে মূর্তি ভাঙ্গার ঘপটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। দিনটি শুক্রবার হওয়ায় বাইতুল মুকাররম মসজিদের আশেপাশে ইসলামী দলগুলো ভারতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে কটুক্তির প্রাতবাদে বিক্ষোভ করবে। একই সময়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করবে পাহাড়ি ছাত্ররা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। এই তিনটি সমাবেশকে নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ বেশ উদ্বিগ্ন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নানা কৌশল প্রণয়ন করছে।
গোয়েন্দরা বলছেন, দূর্গাপূজা নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। হিন্দুদের এই বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঘিরে বিদেশী ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। পতিত শেখ হাসিনার অনুসারীরাও নাশকতার চেষ্টা করতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতে ইতিমধ্যে একজন মারা গেছেন। এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা জনমনে। পুলিশকে তেমন সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না।