রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এআই গবেষণার স্বীকৃতিতে পদার্থে নোবেল

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৩২ এএম, ৯ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার

সম্ভাবনার পাশাপাশি উদ্বেগও প্রকাশ বিজয়ী হিন্টনের

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ব্রিটিশ-কানাডীয় জেফ্রি হিন্টন ও যুক্তরাষ্ট্রের জন হপফিল্ড। তারা মানব মস্তিষ্কের স্নায়ুর আদলে কৃত্রিম ‘নিউরাল নেটওয়ার্ক’ উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে যন্ত্রকে শিখনে সমর্থ করে তুলেছেন। নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, যদিও কম্পিউটারগুলো ভাবতে পারে না, যন্ত্র এখন অনেক কিছু শিখতে ও স্মরণে রাখতে পারে। এ বছর পদার্থে নোবেল বিজয়ীরা এটাকে সম্ভব করতে সহায়তা করেছেন। এ দুই বিজ্ঞানী পুরস্কারের ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার বা ১০ লাখ ৬২ হাজার ৩৮১ ডলার ভাগ করে নেবেন।
গতকাল মঙ্গলবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস বিজয়ী হিসেবে হপফিল্ড ও হিন্টনের নাম ঘোষণা করে। তাদের আবিষ্কার যন্ত্রের শিখন পদ্ধতিকে বিকশিত করায় বর্তমানে অনেক পণ্যেই তা ব্যবহার করা হচ্ছে। বিবৃতিতে কমিটি বলছে, পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা ও পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা এমন প্রযুক্তি তৈরি করেছেন, যা তথ্য প্রক্রিয়া করার জন্য নেটওয়ার্ক কাঠামো ব্যবহার করে। এটি গত দুই দশক ধরে মেশিন লার্নিং বা যন্ত্রের শিখন পদ্ধতির বিকাশকে ব্যাপক এগিয়ে নিয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইর ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত জেফ্রি হিন্টন জানান, তিনি পুরস্কারটি পেয়ে ‘বিস্মিত’ হয়েছেন। এআই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজের ওপর এর প্রভাব ব্যাপক। এটা অনেকটা শিল্পবিপ্লবের মতো। কিন্তু এটা মানুষকে শারীরিক সামর্থ্যে অতিক্রম করার পরিবর্তে বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। আমরা এতে আমাদের চেয়েও স্মার্ট কিছু দেখেছি।’ হিন্টনের মতে, এআই প্রযুক্তি স্বাস্থ্য খাতে বিপ্লব নিয়ে আসবে; বিভিন্ন শিল্পকারাখানায় উৎপাদনও বাড়বে ব্যাপকভাবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, সবকিছুর পর উদ্বেগের কারণও আছে। এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যালেন মুনস দুই বিজয়ীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এআই এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। তাদের আবিষ্কার চিকিৎসা ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, মানব মস্তিষ্কের অনুকরণেই কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরিতে এ দুই বিজ্ঞানী ভূমিকা রাখেন। তাদের তৈরি কৃত্রিম স্নায়বিক নেটওয়ার্কে রয়েছে বিপুল সংখ্যক ‘নিউরন’। এগুলো নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রশিক্ষিত। কার্যত মানুষের মস্তিষ্কের কাজের ধরন থেকেই তারা এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটিয়েছেন। দু’জনের মধ্যে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হপফিল্ড বিকাশ ঘটিয়েছেন পিক্সেলের মতো অতি ক্ষুদ্র আকারের নোডের; তিনি এগুলোকে বিভিন্ন শক্তিমত্তায় সংযুক্ত করেছেন। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিন্টন তাঁর ধারণার মাধ্যমে এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়েছেন। তিনি যন্ত্রের শিখন পদ্ধতির বিকাশ ঘটিয়েছেন।
জেফ্রি হিন্টন দীর্ঘদিন গুগলের সঙ্গেও কাজ করেছেন। গত বছর রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এআই নিয়ে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেন। হিন্টন বলেন, এআই মানব সভ্যতার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে দ্রুত হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে ফোন করে তাঁকে পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। এ সম্পর্কে হিন্টন বলেন, এটা ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। তিনি তখন ক্যালিফোর্নিয়ার একটি সস্তা হোটেলে অবস্থান করছিলেন। ওই হোটেলে ভালো ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না; ফোনের নেটওয়ার্কও খারাপ ছিল। তিনি এমআরআই স্ক্যান করানো প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরে তা স্থগিত করেন।

চিকিৎসায় ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাবকুন নামে দুই মার্কিন বিজ্ঞানীকে বিজয়ী ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার থেকে এ বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। আজ বুধবার রসায়নে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সাহিত্যের নোবেল ঘোষণা আসবে। শুক্রবার শান্তি ও আগামী ১৪ অক্টোবর অর্থনীতির নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে পুরস্কার।