ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণার তুঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৬:৩৭ পিএম, ৯ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ্রাসী প্রচারণায় মেতে উঠেছেন। আমেরিকার জনগণের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন ইস্যু বাজার পাচ্ছে। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে সীমান্ত দিয়ে দিয়ে আসা লক্ষ লক্ষ ইমিগ্র্যান্টদের রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়েছেন ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট প্রার্থি ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস বাইডেনের অভিবাসন নীতি থেকে বেরইয়ে আসতে পারছেন না। উপরন্তু মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতিতি আমেরিকার মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। ইসরাইলের পক্ষে বাইডেন সরকারের একাট্টা অবস্থানের জবাব দেখা যাবে আসছে নির্বাচনে। অনেক মুসলমানই এবারে ডেমোক্র্যাটদের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সুইং স্টেট, বিশেষ করে মিশিগানের মতো রাজ্যে মুসলমানদের ভোট কামালা হারিসের পরাজয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
অভিবাসীবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ক্রমাগত তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির এই প্রার্থীর দাবি, খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হাজারো অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে ‘খারাপ জিন’ ছড়াচ্ছে। ৭ অক্টোবর সোমবার একটি রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকার নেন রেডিও টক শো উপস্থাপক হিউ হিউইট। এ সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের অভিবাসননীতির কড়া সমালোচনা করেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছে ১৩ হাজার খুনি। তারা দেশটিতে সুখে–শান্তিতে বসবাস করছে। ট্রাম্পের এ মন্তব্য মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার (আইসিই) তথ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিকভাবে এ মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেন, এ ধরনের ভাষা অত্যন্ত ঘৃণ্য, জঘন্য, ভুলে ভরা। আমাদের দেশে এর কোনো স্থান নেই। বিভিন্ন সমালোচক বলেছেন, অভিবাসীদের বলির পাঁঠা বানানো এবং জাতিগত পক্ষপাতের লম্বা ইতিহাস রয়েছে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের।
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও রাজনীতি বিশ্লেষক মিখাইল ম্যাকফাউল লিখেছেন, এটি (ট্রাম্পের বক্তব্য) যেন নাৎসিবাদী জার্মানিরই প্রতিধ্বনি করেছে।
আইসিইর দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, সংস্থাটির তালিকাভুক্ত খুনের দাগি আসামি ১৩ হাজার ৯৯ জন। তবে তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় আছেন। অন্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন কয়েক বছর বা দশক আগে।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চান। তিনি অনিবন্ধিত অভিবাসী ও অনুপ্রবেশকারীদের সমালোচনাও করেছেন।
গত মাসে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, কমলা হ্যারিসকে হোয়াইট হাউসের সীমান্তনীতির জন্য বিচারের আওতায় আনা উচিত। ধর্ষণ, লুটপাট, চুরি, লণ্ঠন ও হত্যাকাণ্ডের জন্য অনিবন্ধিত অভিবাসীদের ‘পশু’ বলা ডাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘তারা আপনার রান্নাঘরে ঢুকে আপনার গলায় ছুরি চালিয়ে দেবে।’ ট্রাম্প হাইতি থেকে বৈধ বাসিন্দাদের নির্বাসনের হুমকিও দিয়েছিলেন। তাঁরা ওহাইওতে পারিবারিকভাবে পোষা প্রাণী খেয়ে ফেলেন বলে বিতর্কিত দাবির পুনরাবৃত্তিও করেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট যিনি অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি দাবি করেন, অভিবাসীরা ‘আমাদের দেশের মাটিকে বিষাক্ত করে তুলছে।’ এ মন্তব্যের জন্য সে সময় তাঁকে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার হার রেকর্ড মাত্রায় বেড়ে যায়। দেশটির অনেক ভোটারের কাছে অভিবাসনসংক্রান্ত সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।