বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১   ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নতুন নিয়মের আওতায় আসছে হোম কেয়ার সার্ভিস, উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:২৭ এএম, ১১ অক্টোবর ২০২৪ শুক্রবার

নিউইয়র্কে হোমকেয়ার সার্ভিসকে নতুন নিয়মের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। নতুন নিয়ম চালু হলে হোম কেয়ার সার্ভিস দীর্ঘমেয়াদী ও শক্তিশালী হবে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। যদিও এই সার্ভিসের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, নতুন নিয়ম চালু হলে এই ব্যবসায় জড়িত প্রায় ৭ শতাধিক এজেন্সী ক্ষতির মুখে পড়বে। তাদের অধীনে কর্মরত কয়েক হাজার কর্মী কাজও হারাতে পারেন।

গভর্ণর ক্যাথি হোকুল হোম কেয়ার সার্ভিসের নতুন নিয়ম ও পরিকল্পনায় ইতোমধ্যে স্বাক্ষর করেছেন। তার দাবি, নতুন পরিকল্পনায় হোম কেয়ার সার্ভিস দীর্ঘমেয়াদী ও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এদিকে গভর্ণরের ঘোষিত নতুন পরিকল্পনায় হোম কেয়ার সার্ভিসের সিডিপ্যাপ সেবায় পরিবর্তন না হলেও নির্দিষ্ট একটি এজেন্সিকে দিয়ে কর্তৃপক্ষ কিভাবে কার্যক্রম চালাবেন সেটি স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন হোম কেয়ার সার্ভিস এজেন্টরা।

জানা গেছে, হোমকেয়ার ব্যবহারকারীদের উচ্চমানের সেবা প্রদান, পরিচর্যাকারীদের সহায়তা এবং সিডিপ্যাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম দীর্ঘ মেয়াদী আর স্থিতিশীল করতে স্টেট ভিত্তিক পার্টনারশীপ জোটের ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 নিউইয়র্ক স্টেটজুড়ে পার্টনারশীপ হিসেবে পাবলিক পার্টনারশীপ এলএলসি (পিপিএল) কাজ করবে। এই পিপিএলের নিয়ন্ত্রণে নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে চারটি এজেন্সী কার্যক্রম চালাবে।

এজেন্সীগুলো হলো চাইনীজ আমেরিকান প্ল্যানিং কাউন্সিল, কনসেপ্টস অব ইন্ডিপেন্ডেন্টস ইনক, অ্যাঞ্জেল ইন ইউর হোম, কনজ্যুামার ডিরেক্টেড চয়েজেস। এই চার এজেন্সির জোটে ৩০ টির মতো উপ-আঞ্চলিক সংগঠন থাকবে। সদর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে এবং এজেন্সীর নিয়ন্ত্রণে জোটের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে এক হাজার ২০০ নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এই উদ্যোগে প্রায় আড়াই লাখ নিউইয়র্কবাসী হোম কেয়ার সেবা পাবেন।

এই পরিকল্পনায় যেসব এজেন্সীর অধীনে হোম কেয়ার সেবা গ্রহীতা রয়েছেন, চলতি বছরের ১ অক্টোবর থেকে  আগামী বছর  ২০২৫ সালের ৩০ মার্চের মধ্যে সে সকল সেবা গ্রহীতার সব তথ্য ও কাগজাদি ঐ নির্দিষ্ট পিপিএলের কাছে হস্তান্তর কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে হস্তান্তরের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিবেন কর্তৃপক্ষ। হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আগামী বছরের এপ্রিল মাস থেকে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন নিয়োগকৃত জোট হোম কেয়ার সেবা কাজ শুরু করবে।

হোম কেয়ার সার্ভিসের সঙ্গে জড়িতরা জানান, নতুন এ পরিকল্পনায় সিডিপ্যাপের সেবায় কোন পরিবর্তন না হলেও সেটার নিয়ন্ত্রণ নির্দিষ্ট কোম্পানীর অধীনে চলে যাবে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায় ধস নামবে। নিউইয়র্কে ছোট-বড় প্রায় ৬ শতাধিক এজেন্সী দীর্ঘদিন সিডিপ্যাপ প্রোগ্রামের আওতায় হোম কেয়ার সেবা পরিচালনার ব্যবসা করে আসছে। এতে প্রায় কয়েক হাজার কর্মী চাকরি করছেন। হোম কেয়ার সার্ভিসের পরিবর্তনে গভর্ণর এ পরিকল্পনায় ১২০০ নতুন কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসায় জড়িত ৬ শতাধিক এজেন্সীর কর্মরত কর্মীরা চাকরি হারাবেন। তাছাড়া সিডিপ্যাপ এর আড়াই লাখ কনজ্যুমারকে একসাথে হস্তান্তর এবং একটি এজেন্সীর দ্বারা সেবা প্রদানে বেশ জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

কমিউনিটির অনেক সেবা গ্রহীতা যারা তারা পুরাতন এজেন্সীর মাধ্যমে সেবা গ্রহণে অভ্যস্ত। নতুন করে একটি এজেন্সীর মাধ্যমে সেবার মান কতটুকু বজায় থাকবে সে বিষয়ে সন্দীহান হোমকেয়ার সাথে জড়িত এজেন্সীর কর্তৃপক্ষ। একটি এজেন্সীর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকায় সেবার মান কনজ্যুমারের যাচাই করার সুযোগ থাকবে না। এছাড়া পিপিএল যে ৩০টি উপ আঞ্চলিক এজেন্সীকে দিয়ে কাজ করাবে সে সব এজেন্সীর তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি এবং সে সব এজেন্সী কিভাবে কাজ করবে সেটিও স্পষ্ট নয় এমন দাবি বর্তমানে হোমকেয়ার সাথে জড়িত এজেন্সীর কর্তৃপক্ষের।

এদিকে হোম কেয়ার সেবায় নতুন পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম অর্গনাইজেশন। আগামী ১১ অক্টোবর এ সংক্রান্ত রায় দিবে। এছাড়াও হোম কেয়ার এজেন্সীগুলোকে পিএমপি প্রোগ্রামে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার যে ব্যবস্থা রেখেছে সে বিষয়ে আপত্তি তুলে আদালতে মামলা করেছেন ব্যবসায়ীরা।

কয়েকটি হোম কেয়ার সার্ভিসের মালিক বলেন, গভর্ণরের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আমরা ধোঁয়াশায় আছি। কর্তৃপক্ষ বলছে ১২০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু আমাদের এখানে ৬ থেকে ৭০০ এজেন্সীর প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি লোক কাজ করছেন। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এসব কর্মী কাজ হারাবেন। তখন তাদের কি হবে?

তারা আরও বলেন, নতুন পরিকল্পনা কার্যকর হলে সেবা গ্রহীতাদের পরিবারের সদস্য অথবা আত্মীয় স্বজন যারা কেয়ার গিভার হিসেবে কাজ করছেন তারাও এ দায়িত্ব থেকে বাদ পড়বেন। কারণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাদের নির্দিষ্ট কেয়ার গিভার দিয়ে হোম কেয়ার সেবা প্রদান করা হবে।

এ বিষয়ে গভর্ণর ক্যাথি হোকূল বলেন, ‘হোম কেয়ার সার্ভিস ব্যবহারকারীদের রক্ষা আর সেবাকারীদের সমর্থন করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিডিপ্যাপের মতো প্রোগ্রামটি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের পরিকল্পনা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সিডিপ্যাপ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিউইয়র্কবাসীদের প্রয়োজনীয় উন্নতমানের সেবা প্রদান।