মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৭ ১৪৩১   ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মেয়র এডামস’র অফিসে পদত্যাগের হিড়িক

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৫৬ এএম, ১২ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার


 
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের ঠিক আগে এবং পরে গুরুত্বপূর্ণ তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। নিউইয়র্ক পুলিশ এনওয়াইপিডি’র কমিশনার অ্যাডওয়ার্ড ক্যাবানের বাসায় এফবিআই অভিযান চালাবার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন। এটি ছিল নিউইয়র্কে মেয়রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কোন ব্যক্তির আলোচিত পদত্যাগের ঘটনা। মেয়রের বিরুদ্ধে আনিত ঘুষ ও দুর্নীতির মামলায় তাকে আদালতে হাজির হবার আদেশ দিলে তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথমবার আদালতে হাজির হন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তারপর থেকে চারদিক থেকে তাঁকে পদত্যাগ করার চাপ আসতে থাকে। এরই মধ্যে নিউইয়র্ক সিটির দুই ডেপুটি মেয়র ফিলিপ ব্যাংকস, যিনি এরিক অ্যাডামসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এবং শিনা রাইট পদত্যাগ করেন। এই পদত্যাগের পর ঝড় উঠে চারদিকে। আদালতে মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনানির আগেই তার চারপাশ শূন্য হতে থাকে। মেয়র এরিক অ্যাডামস গত ৭ অক্টোবর বলেন, ডেপুটি মেয়র ফর পাবলিক সেফটি ফিলিপ ব্যাংকসের পদত্যাগপত্র তিনি গ্রহণ করেছেন। তবে শিনা রাইটস-এর পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে এখনো মেয়র কোন মন্তব্য করেননি।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার এনওয়াইপিডি-র স্কুল নিরাপত্তা সদর দফতরে এফবিআই এজেন্টরা তদন্তের অংশ হিসেবে কুইন্সের এনওয়াইপিডি-র স্কুল সেফটি ডিভিশনের সদর দফতরে অভিযান চালায় বলে জানা যায়। এই অভিযানগুলি মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রশাসনকে লক্ষ্য করে সর্বশেষ এবং টিম পিয়ারসনের তদন্তের সাথে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। ঘুষের বিনিময়ে ঠিকাদার বাছাইয়ের অভিযোগে তদন্ত করা হচ্ছে। এজেন্টরা লং আইল্যান্ড সিটির কুইন্স প্লাজা নর্থের সদর দফতরে অভিযান চালায় এবং বিভিন্ন কাগজপত্র ও রেকর্ড বাজেয়াপ্ত করে।
এফবিআই এজেন্টরা পুলিশ কমিশনার অ্যাডওয়ার্ড ক্যাবান, পুলিশের দুই ল্যাফটেনেন্ট, দুইজন ডেপুটি মেয়রের বাসায় একযোগে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ডিভাইস জব্দ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে অভিযুক্তদের তালিকা আরও লম্বা হতে পারে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গ্রেপ্তার অভিযানও। গত ৮ অক্টোবর, গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোহাম্মদ বাহিকে, যিনি আগের দিন ৭ অক্টোবর মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। মোহাম্মদ বাহি অ্যাডামস প্রশাসনের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ইউনিটে কাজ করতেন। বাহির বিরুদ্ধে ২০২১ সালের মেয়রের প্রচারণায় অবৈধ অনুদানের জন্য ফেডারেল তদন্তের সাথে সম্পর্কিত সাক্ষী প্রভাবিত করা এবং প্রমাণ ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়েছে। নিউইয়র্কের সাউদান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি উইলিয়ামসের মতে, বাহি ফেডারেল তদন্তকারীদের কাছে সাক্ষীদের মিথ্যা বলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং প্রমাণ ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলেন, যার মধ্যে একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ মুছে ফেলা অন্তর্ভুক্ত। ৪০ বছর বয়সী মোহাম্মদ বহি প্রথম অ্যাডামস প্রশাসনের কর্মকর্তা যিনি প্রকাশ্যে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।
মেয়র এরিক এডামসের দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন এশীয় বিষয়ক পরিচালক উইনি গ্রেকো গত ৭ অক্টোবর পদত্যাগ করেছেন। ফেডারেল তদন্তে জড়িত থাকার কারণে গ্রেকো পদত্যাগ করেন। রানা আব্বাসোভা, যিনি এডামসের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়। গ্রেকো চীনা নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে এফবিআই’র তদন্তের অধীনে রয়েছেন। বিদেশি দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যকলাপের কারণে ফেডারেল আদালত তাকে অভিযুক্ত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রানা আব্বাসোভা, যিনি তুরস্কের সঙ্গে এডামসের সম্পর্কের তদন্তে মূল সাক্ষী হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন তুরস্কের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এরিক এডামস অবৈধভাবে ভ্রমণের সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন। এডামসের বিরুদ্ধে ৫৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আব্বাসোভা তার কর্মচারিদের বার্তা মুছে ফেলতে বলেন এবং এফবিআই এজেন্টদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি ট্যাক্সট মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। গ্রেকো এবং এডামসের সম্পর্ক ব্রুকলিনের বরো প্রেসিডেন্ট থাকার সময় থেকেই। তিনি এডামসের প্রচারাভিযানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেন এবং চীনা সম্প্রদায়ের সঙ্গে লিয়াজোঁর দায়িত্ব পালন করতেন। এডামসের বিরুদ্ধে চলমান ফেডারেল অভিযোগের মধ্যে এই পদত্যাগ ও বরখাস্ত এসেছে, যা সিটি হলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
শীনা রাইট, যিনি সিটির ফার্স্ট ডেপুটি মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, ৭ অক্টোবর সোমবার তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। সিটি হলের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তার শীর্ষ সহকারীদের একজন তার পদে নিযুক্ত হতে পারেন। প্রসিকিউটর হ্যাগান স্কটেন গত সপ্তাহে আদালতে শুনানির সময় বলেন এই মামলায় সাক্ষী হস্তক্ষেপের উল্লেখযোগ্য বিষয় রয়েছে।
অ্যাডামসের আইনজীবী অ্যালেক্স স্পাইরো দাবি করেছেন, আব্বাসোভা প্রসিকিউটরদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন।