ভারতে ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেলেন হাসিনা
আজকাল ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৫৯ এএম, ১২ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার
ছাত্র জনতার হাতে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে তার বর্তমান আশ্রয়দাতা দেশ ভারতী। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা পরিবারের ঘনিষ্ঠ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা গত বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সাধারণত কোনও দেশে কেউ আশ্রয়প্রার্থী হলে সেই দেশের ট্রাভেল ডকুমেন্ট বা ‘টিডি’ ইস্যু করে। ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে ভিসা প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিশ্বের যেকোনও দেশে ভ্রমণও করতে পারেন। যা ঠিক পাসপোর্টের বিকল্প হিসাবে কাজ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এতে ভিসাও দিয়ে থাকে। এর দাপ্তারিক নাম ‘আইডেন্টিটি সার্টিফিকেট’ বা আইসি। ভারতের সাধারণ পাসপোর্ট গাঢ় নীল রঙের হলেও আইসি সাধারণত হলুদ রঙের একটি বুকলেটের আকারে জারি করা হয়।
দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে ভারত ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ ইস্যু করেছে কিনা, আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের কাছ থেকে এ সম্পর্কিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তারা বিষয়টি স্বীকার করেনি, আবার অস্বীকারও করেনি। বরং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত পরবর্তী ব্রিফিংরে অপেক্ষা করতে বলেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেখ হাসিনার অফিসিয়াল বা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টটি গত ৫ আগস্ট তিনি দেশ ছাড়ার সময়ও বৈধ ছিল। পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তা বাতিল করে দিয়েছে। ফলে এখন যদি তিনি ভারত থেকে তৃতীয় কোনও দেশে যেতে চান, সেই পুরনো পাসপোর্ট কাজ করবে না। দরকার হবে একটি ‘টিডি’ জারি করার, আর ভারত সরকার ঠিক সেটাই করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাহলে কি শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ভারতেই শেখ হাসিনাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তার বোন শেখ রেহানাও সেখানে অবস্থান করছেন। অবশ্য ট্রাভেল ডকুমেন্ট পেলেও আপাতত শেখ হাসিনা ভারতেই থাকবেন। শিগগিরই ভারতের বাইরে ভ্রমণে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই তার। শেখ হাসিনার গুরুত্ব বিবেচনায় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে ভারত।
এদিকে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ভারতের একজন সাবেক শীর্ষ কূটনীতিবিদ বলেন, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সত্যিই দিয়ে থাকে, তা এতটুকুও অবাক হওয়ার মতো না। কারণ এই পরিস্থিতিতে এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত পদক্ষেপ। ভারতে ম্যাকলিয়ডগঞ্জ-সহ বিভিন্ন জায়গায় যে কয়েক লাখ তিব্বতি শরণার্থী থাকেন, তারাও কিন্তু বেশিরভাগই ভারতের পাসপোর্টধারী নন। বরং এই ধরনের ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ নিয়েই তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফর করেন।
ওই সাবেক রাষ্ট্রদূতও বলছিলেন, শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় (পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম) দেবে কিনা, জানি না। কিন্তু গত দুই মাসের ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে গড়িয়েছে, তাতে দালাই লামার ঘটনার সঙ্গে আমি কিন্তু শেখ হাসিনার কেসের অনেক মিল পাচ্ছি। ভারতে যতদিনই থাকুন, শেখ হাসিনা হাত গুটিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকবেন, এটা তো আর হতে পারে না। রাজনৈতিক প্রয়োজনে বিশ্বময় ছড়িয়ে ছিটেয়ে থাকা নেতাকর্মদের সঙ্গে দেখা করতে ভারতের বাইরেও যেতে হবে। দালাই লামাও তাই করেছেন, রাজনীতি ও কূটনীতি চালিয়ে গেছেন এবং পৃথিবীর বহু দেশে সফর করেছেন।
তিব্বতি ধর্মগুরু চতুর্দশ দালাই লামা ১৯৫৯ সালে চীনের চোখ এড়িয়ে ভারতে পালিয়ে আসেন এবং এ দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তিনিও ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ বা আইসি নিয়েই সারা পৃথিবী চষে বেড়ান। ভারতের পাসপোর্ট নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আজ পর্যন্ত তিনি সেটি গ্রহণ করেননি।