আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৯.৮৬ শতাংশ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:০৮ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ সোমবার
চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেরিতে হলেও মুদ্রা সংকোচনের পথে হাঁটছে। একইসঙ্গে বাড়ছে সুদের হারও। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। জ্বালানিসহ অর্থনীতির সংকটে ব্যবসায়ীরাও ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ কম করছেন। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।
চলতি বছরের আগস্ট মাসে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আবার চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। সেই অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি ২৭ বেসিস পয়েন্ট কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে গত জুলাই-আগস্ট মাসে অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানিতে। আমদানির এলসি খোলা কমে যাওয়া বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা তেমন ছিল না। তাই আগস্টে প্রবৃদ্ধি কমেছে। এছাড়া সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধি কমেছে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদহার ১৫-১৬ শতাংশ। সুদের হার বেশি হলে ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে খেলাপির আশঙ্কা থাকে। এমন বাস্তবতায় ব্যাংকগুলোরও বেসরকারি খাতের চেয়ে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে আগ্রহ বেশি। ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার আকর্ষণীয় হওয়ায় ব্যাংকগুলো ঝুঁকিমুক্ত এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ফলে সরকারকে ঋণ দিয়ে আয়ও বেশি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পণ্য আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলা ও নিষ্পত্তি উভয়ই কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। গত জুলাই ও আগস্টে ১০ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার বা ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি বোঝার অন্যতম একটি সূচক হলো মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি নিরূপণ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ।
বছরের নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পণ্য আমদানির এলসি খোলা কমার কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কারণ বলে মনে করছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুই কারণে আমদানির এলসি খোলা কমেছে। প্রথমত, সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটেছে। আবার সে সময় ব্যাংকও বন্ধ ছিল। তাতে আমদানি-রপ্তানিতে সরাসরি ব্যাঘাত ঘটেছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সারা দেশে, যার ফলে সরাসরি আমদানিতে প্রভাব পড়েছে। যার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম ছিল। তাই আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে।
এলসি কমার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের পিছুটান দেওয়ার কথা বলছেন এ ব্যাংকার। তার ভাষ্য, ‘আগের মতো তারা বিনিয়োগ করছেন না, তাতে আমদানি কমেছে। এটা কমে যাওয়ার কারণ ডলার দরে অস্থিতিশীলতা। তবে এখন ডলার দরে স্থিতিশীলতা আসছে। এটা বজায় থাকলে আবার বিনিয়োগ বাড়বে। তখন বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।’
এদিকে দেশে কয়েক বছর ধরে চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। অর্থের জোগান কমিয়ে এই মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে চাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরই পাঁচ দফা বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদহার। এর প্রভাবে একদিকে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতে কমছে ঋণপ্রবাহ। ফলে চাপে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সুদহার বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে।
মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এই ঘোষণা দিয়েছে। গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত প্রকৃত প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ৮০ শতাংশে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে হলে অবশ্যই সরকারকে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ কমাতে হবে। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারি ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সীমিত করার বিষয়ে সরকারকে অনুরোধ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে নীতি সুদহার, ব্যাংক ঋণের সুদহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে।