সেনাবাহিনী ও পুলিশ দিয়ে উৎসব করতে হয় এমন সমাজ চাই না: ড. ইউনূস
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৩০ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ সোমবার
সব সম্প্রদায়ের সমান অধিকারের বাংলাদেশ গড়তে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা নিয়ে বিশ্বের সামনে গর্ব করা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে উৎসব পালন করাটা প্রত্যাশিত নয় জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এবারের মতো আমরা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু আমরা এমন সমাজ চাই না, যেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দিয়ে আনন্দ উৎসব করতে হবে। এজন্য ছাত্রসমাজ আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন একটি সমাজ গঠনের চেষ্টা করছে। আগামী দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে পূজা বা যেকোনো উৎসব পালন করতে যেন না হয়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে সবাইকে।’ ১২ অক্টোবট শনিবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
দুর্গাপূজার আনন্দ এবার বিশেষ আনন্দে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘চার দিনের ছুটি পেয়ে সবাই খুশি। সব জায়গায় নির্বিঘ্নে পূজা করতে পারছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সবাই চেষ্টা করেছেন, কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, বিশৃঙ্খলা যেন না হয়। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সবাই মিলে কাজ করলে যে সফল হওয়া যায়, তা প্রমাণ হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু সংখ্যালঘু নয়, মুসলমানদের ছেলেমেয়েরাও ঘর থেকে বের হলে বাসায় ফিরবে কি না সে নিরাপত্তা ছিল না। এমন সমাজ আমরা চাই না। আমরা একটি কাল্পনিক সমাজের কথা বলছি, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে এমন সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব।’
সব নাগরিকের স্বপ্নের রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘ছোটখাটো বিষয়ে আমরা যেন আটকে না থাকি। আপনাদের ছেলেমেয়েরা যেন স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার পায়। সত্যিকার অর্থে নতুন বাংলাদেশের পক্ষে থাকুন। আমরা স্বপ্নের রাষ্ট্র গঠন করব, যেন দুনিয়ার বুকে গর্ব করতে পারি। আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন আকাশে উড়তে পারে, সেই ব্যবস্থা করব। বন্দি হয়ে থাকার জন্য আমাদের ছেলেমেয়েরা জন্মগ্রহণ করেনি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অধিকারবঞ্চিত মানুষ ছিলাম। সব অধিকার একটি গোষ্ঠীর কাছে ছিল। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এখন সময় এসেছে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার। যে অধিকার কেড়ে নিতে চাইবে, তাদের শাস্তি হবে। সবার অধিকার রক্ষায় সংস্কার কমিটিগুলো রূপরেখা দেবে। কিন্তু কমিশনের মাধ্যমে দেশ পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়, তবে একটি রূপরেখা তারা দিতে পারবেন। দেশটাকে পাল্টে ফেলার এই সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়।’
এ সময় সমমর্যাদা ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দাবি জানান সনাতন ধর্মের নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পৌঁছালে তাকে পূজা উৎসব পরিষদের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।