বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুজিবকে জাতির জনক মনে করে না সরকার

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:২৬ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার


* চাপিয়ে দেয়া ৮ জাতীয় দিবস বাতিল হচ্ছে
 
বাংলাদেশের স্বাধীনতার কারো একক কৃতিত্ব নয়, বরং ধাপে ধাপে অনেক মানুষের ত্যাগের বিনিমিয়ে তা এসেছে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক মনে করে না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। গত বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসগুলো যা জাতীয় দিবস হিসেবে মানুষে উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সেগুলোও বাতিল করেছে সরকার।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গুম-খুন করে এবং গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল। ভোটবিহীন সরকারেরই কোনো বৈধতা নেই। সেই সময়ে অনেক কিছু করা হয়েছে। সব কটি পুনর্গঠন ও পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।
বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মনে করে কি না এই সরকার, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই না। এই ভূখ-ের লড়াইয়ের ইতিহাসে বহু মানুষের অবদান রয়েছে। সে ইতিহাস কিন্তু কেবল ’৫২-তেই শুরু হয়নি, ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, ’৪৭ ও ’৭১-এর লড়াই আছে, ’৯০ ও ’২৪ আছে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, যোগেন মন্ডল, মাওলানা ভাসানীসহ অনেক মানুষের লড়াই আছে। এখানে একজন জাতির পিতা না, বরং অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছে, যাঁদের অবদানের ফলে এই ভূখ-, এই রাষ্ট্র, স্বাধীনতা পেয়েছি। ফলে এটিকে একটি দলে, একজন ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ করতে চাই না।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের যে বহুমুখিতা রয়েছে, নানা মাত্রা রয়েছে, আওয়ামী লীগ তা এত দিন অস্বীকার করেছে। আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ভাসানী। তাঁকে ইতিহাসে রাখেনি। আওয়ামী লীগ আসলে ইতিহাসকে নষ্ট করে ফেলেছে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামীলীগের ফ্যাসিস্ট আদর্শ এবং সেই আদর্শকে ধারণ ও চর্চার জন্য দিবসগুলোকে জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তারা কাকে জাতির পিতা বলল, তারা কোন দিবসকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করল, নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না। আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে চাচ্ছি। ফলে ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নতুন করে দিবস আসতে পারে বলেও জানান তিনি।
৭ মার্চসহ আট জাতীয় দিবস বাতিল
এদিকে ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ আটটি জাতীয় দিবস উদ্যাপন বা পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রতি এক বৈঠকে আটটি দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে দিবসগুলো উদ্যাপন বা পালন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।
এ বিষয়েয় এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘৭ মার্চকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। যেটা ইতিহাসের অংশ, নির্মোহভাবে ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি...থাকবে। কিন্তু সেটি দিবস হিসেবে যে চর্চার যে রাজনীতি আছে। গণ-অভ্যুত্থানের সরকার সেই রাজনীতি চলতে দিতে পারে না।’
বাতিল করা এসব দিবস আওয়ামীলীগের গত ১৬ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন ভাবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ঘোষণা করে। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ’ হিসেবে ঘোষণা এবং দিবসটি উৎযাপনের সিদ্ধান্ত হয় ২০২০ সালে। এই ভাষণকে ২০১৭ সালে ইউনেসকো ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ২০০১ সালে বিএনপি- জোট সরকার তা বাতিল করেছিল। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দিবসটি আবার পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বাকি ছয়টি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।