ইসরাইলি বিমান হামলায় প্রাণ গেল ফিলিস্তিনি চিত্র-যোদ্ধার
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৭:৪০ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৪ রোববার
মাহাসেন আল-খতিব তার অনন্য প্রতিভা ব্যবহার করে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও যুদ্ধের ভয়াবহতা চিত্রিত করেছিলেন। গত বছরের অক্টোবর থেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি তার চিত্রকর্মের মাধ্যমে গাজার ভয়াবহ দৃশ্যগুলো চিত্রিত করছিলেন।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) তিনি তার শেষ চিত্রকর্ম পোস্ট করেছিলেন সামাজিক মাধ্যমে। যেখানে তিনি ১৯ বছর বয়সি শাবান আল-দালুকে চিত্রিত করেন। যিনি কিছুদিন আগেই গাজার আল-আকসা হাসপাতালে ইসরাইলি বোমাবর্ষণে প্রাণ হারান।
তার মর্মান্তিক মৃত্যুর সেই চিত্র তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলার কিছুক্ষণ পরেই ইসরাইলি বিমান হামলায় প্রাণ হারান মাহাসেন নিজেও। এদিন হামলাটি ঘটেছিল গাজার উত্তরের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে তার বাসার পাশেই।
মাহাসেন এবং তার পরিবারের সদস্যরা তখন নিজেদের বাড়িতেই ছিলেন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, গাজায় আর কোনো নিরাপদ জায়গা নেই, যেখানে পালিয়ে যাওয়া যায়।
ক্রমাগত ইসরাইলি হামলার মুখে এর আগেও বহুবার তিনি এবং তার পরিবার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যু তাদের পিছু ছাড়েনি।
বর্বর ইসরাইলি বাহিনী গত ১৫ দিন ধরে উত্তর গাজায় অনবরত বোমা বর্ষণ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যাকে বর্ণনা করছেন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর সবচেয়ে সহিংস আগ্রাসন হিসেবে।
মাহাসেনের চাচা হোসাম আল-খতিব মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ইসরাইলি বাহিনী যখন এই এলাকায় তীব্র হামলা চালায়, তখন তাদের বাড়িটি ছিল উদ্বাস্তু মানুষে পূর্ণ।
হোসাম জানান, বিমান হামলায় মাহাসেন তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণ হারান এবং অপর ৮ জন আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
ব্যাপক হারে গোলাবর্ষণের কারণে অ্যাম্বুলেন্স এবং উদ্ধারকর্মীরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।
ঘটনার সময় ও পরবর্তী ভয়াবহতা উল্লেখ করে হোসাম বলেন, ‘আমরা এখনও তার মরদেহ দাফন করতে পারিনি। সেটি এখনও কামাল আদওয়ান হাসপাতালে রয়েছে’।
মাহাসেন আল-খতিব ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী, স্টোরিবোর্ড শিল্পী, ফ্রিল্যান্স চরিত্র ডিজাইনার এবং ডিজিটাল শিল্পের প্রশিক্ষক। তিনি তার কাজের মাধ্যমে তার পরিবারকে সহায়তা করতেন। তিনি তার প্রতিভা ব্যবহার করে ফিলিস্তিনি অধিকার এবং ইসরাইলি অবিচারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতেন।
গাজায় যুদ্ধ চলাকালেও তিনি ফ্রিল্যান্স ডিজিটাল আর্টে বিনামূল্যে অনলাইন কোর্স চালু করেছিলেন। যাতে ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করা ব্যক্তিরা আয়ের উৎস সৃষ্টি করতে পারেন।
মাহাসেনের বন্ধু এবং শিক্ষার্থী জুমানা শাহিন বলেন, ‘মাহাসেন ছিলেন গাজার সবচেয়ে পেশাদার, নম্র এবং প্রিয় শিল্পীদের একজন। তিনি যার সঙ্গেই কাজ করতেন, তার ওপর একটি স্থায়ী ছাপ রেখে যেতেন’।
গাজায় ইসরাইলের নিয়মিত বোমাবর্ষণ এবং দুর্বল ইন্টারনেট সুবিধার মাঝেও মাহাসেন গাজার বাস্তবতাকে চিত্রিত করে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতেন।
তার বিষয়ে বলতে গিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শাহিন বলেন, ‘তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন যে, আমি চাই আমার জ্ঞান ও কর্ম যতটা সম্ভব বেশি মানুষকে শেয়ার করতে, কারণ যদি আমি মরে যাই, অন্তত আমার জ্ঞান ও কর্ম অন্যদের মাধ্যমে বেঁচে থাকবে’।
মাহাসেনের আরেক সহকর্মী বিলাল আবুনাদি এখনও তার মৃত্যু সংবাদে হতবাক। তারা একটি মিডিয়া ও গ্রাফিক্স ডিজাইন কোম্পানিতে একসঙ্গে কাজ করতেন।
বিলাল বলেন, তার কর্মশক্তি এবং দায়িত্ববোধ সবার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল। তিনি সবকিছুকে আনন্দময় করে তুলতেন এবং সবার ভেতর থেকে সেরাটা বের করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন।
শনিবার মাহাসেনের মৃত্যুর সংবাদ দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে তার হাজার হাজার অনুসারী, শিক্ষার্থী এবং সহকর্মী শোক প্রকাশ করেন।
তার বিষয়ে বিলাল আরও বলেন, ‘তিনি খুবই সদয় এবং উদার মনের মানুষ ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, গাজার শিল্পীদের জীবনে সর্বোত্তম কিছু পাওয়া উচিত’।
(মিডল ইস্ট আই-তে প্রকাশিত দখলকৃত গাজা ভূখণ্ড থেকে আহমেদ দ্রমলির লেখা অনুসারে।)