মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাষ্ট্রপতির অপসারণ

বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৮:১৯ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০২৪ রোববার

    বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের সায়
    গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপ আজ

 


রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক জটিলতা থাকায় বিষয়টিকে রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে সামলানোর চেষ্টা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তারই অংশ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছেন সংগঠন দুটির নেতারা। রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগের পক্ষে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মত পাওয়া গেছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি। দলীয় ফোরামে আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত জানাবে দলটি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ মনে করেন, বিএনপি রাজি হলে রাষ্ট্রপতিকে সরানোর বিষয়ে আর কোনো জটিলতা থাকবে না। ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে আজ রবিবার গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট ও গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে তারা বসবেন বলে জানান তিনি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতারা অংশ নেন। ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষে আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের নতুন যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। আজকে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেছি।’

তিনি জানান, বিএনপির বৈঠকে তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে— সেকেন্ড রিপাবলিক কীভাবে গঠন ও ঘোষণা করা যায়। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে কীভাবে দ্রুততম সময়ে অপসারণ করা যায় এবং কীভাবে রাজনৈতিক সংকট দূর করা যায়। তৃতীয়ত, জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে কীভাবে সরকার পরিচালনা করা যায়।

হাসনাত বলেন, ‘বিএনপি আমাদের সব কথা শুনেছে। তারা জানিয়েছে আমাদের বার্তা নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করবে, পরে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।’

একই ইস্যুতে গতকাল বিকেলে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাসনাত আব্দুল্লাহসহ পাঁচ নেতা। পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দলটির আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম ছাড়াও ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন রাষ্ট্রপতির অপসারণ বিষয়ে তাদের আগের অবস্থানই জানিয়েছে। দলটি মনে করে, ক্ষমতাচ্যুত ও দেশত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নিয়ে রাষ্ট্রপতি ‘মিথ্যাচার’ করে তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। সুতরাং তিনি এ পদে থাকতে পারেন না।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পালিয়ে যাওয়াতে কি কোনো সংকট হয়েছে? আর বর্তমান রাষ্ট্রপতি তো পলাতক প্রধানমন্ত্রীরই নিয়োগ করা।’ এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান অস্পষ্ট বলে মনে করেন গাজী আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

এর আগে গত শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বৈঠক করেন জামায়াতে ইসলামীর তিন নেতার সঙ্গে। মগবাজারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সাহাবুদ্দিনকে সরানোর বিষয়ে ছাত্র নেতৃত্বের দাবির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী নীতিগতভাবে একমত। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন করার পক্ষে মত দেয় দলটি। গতকাল এক আলোচনা সভায় দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক আব্দুল হালিম বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ চায়।

রাষ্ট্রপতিকে অপসারণসহ পাঁচ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। গত বুধবার বিএনপির তিন নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা সৃষ্টি না করার মত দেন। এরপর বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। ওইদিন রাতেই তারা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর জানানো হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়ে সংগঠনটি অনড় অবস্থানে রয়েছে। সংগঠনের নেতারা বলছেন, প্রয়োজনে রাজপথে নেমে এর সমাধান করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়ে আমাদের বক্তব্য খুবই পরিষ্কার। বর্তমান পরিস্থিতি রাজনৈতিক দল এবং গোষ্ঠীর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটি সম্ভব। আমরা সে কাজটিই করছি। কোন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করে “প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক” করা যায়। আলোচনা অব্যাহত আছে, এখনো পর্যন্ত ইতিবাচকের দিকেই যাচ্ছে। আমরা আশা করি, অতিদ্রুত রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের একটি উপায় পাওয়া যাবে।’

সংগঠনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে আমরা কোনোভাবেই এই পদে দেখতে চাই না। কোন প্রক্রিয়ায় সরানো হবে সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনো পর্যন্ত বিএনপি ছাড়া বাকি সবার ইতিবাচক বক্তব্য পেয়েছি। বিএনপি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’