কমেছে এলসি খোলা-নিষ্পত্তি
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৫৫ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৪ সোমবার
ডলার সংকট কিছুটা কমলেও এখনো ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। জুলাই-আগস্টে সরকার পতনের আন্দোলন, জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে অর্থনীতিতে অস্থিরতা রয়ে গেছে। বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা ও নিষ্পত্তি এখনো সহজ হয়নি। এ কারণে আমদানিও কমে গেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানির এলসি খোলা কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তির হারও কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৯ কোটি ডলারের, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৬৭১ কোটি ডলারের। সে হিসাবে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ১১২ কোটি ডলার বা ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬২১ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় আড়াই শতাংশ কম।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি সবচেয়ে বেশি কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে। এ সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে ৩৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ কম। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছিল ৬৫ কোটি ১৩ লাখ ডলারের। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুধু এলসি খোলা নয়, নিষ্পত্তির হারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৯ কোটি ১১ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ২৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, দুই বছর ধরেই দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি হচ্ছে না। ফলে জ¦ালানি অপর্যাপ্ততার কারণে অধিকাংশ শিল্প পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না। এর মধ্যে দুই মাসেরও বেশি সময় শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। আবার এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিকভাবে ঋণের সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। এটিও ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে তুলছে, অনেক কোম্পানি পড়েছে লোকসানে। অধিকাংশ কোম্পানি এখন প্রয়োজন না হলে ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। এ সময়ে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হারও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৭ শতাংশ ও এলসি নিষ্পত্তির হার কমেছে ১৩ শতাংশের বেশি।
এদিকে দেশে দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি সংকট থাকলেও পণ্যটির আমদানির এলসিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম) আমদানির এলসি খোলা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার, এ সময় এলসি নিষ্পত্তি করা হয়েছে ২২৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে জ্বালানির এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ২৭০ কোটি ডলার ও নিষ্পত্তির হার ছিল ২৪১ কোটি ডলারের। সে হিসাবে এলসি খোলার হার কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ ও নিষ্পত্তির হার কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। যদিও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে চাহিদা অনুযায়ী এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
দেশে সরবরাহ সংকটের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়লেও আমদানির এলসি কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা হয়েছে ১৩৩ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪৫ কোটি ৫২ লাখ ডলারের। এ হিসাবে এলসি খোলা কমেছে ১২ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভোগ্যপণ্যের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩৭ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৬৬ কোটি ৯১ লাখ ডলারের। সেই হিসাবে ২৯ কোটি ৩২ লাখ ডলারের এলসি কম নিষ্পত্তি হয়েছে।
অবশ্য ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি, যন্ত্রাংশ আমদানিসহ অধিকাংশ খাতের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হার কমলেও বেড়েছে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছিল ৫৩৯ কোটি ১৯ লাখ ডলারের। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলা হয়েছে ৫৬৪ কোটি ৩২ লাখ ডলারের। এ হিসাবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ কোটি ১৩ লাখ ডলারের এলসি বেশি খোলা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৫২৯ কোটি ডলারের, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৭২ কোটি ডলারের। চলতি প্রথম প্রান্তিকে ৪৩ কোটি ডলার বা ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ এলসি বেশি নিষ্পত্তি হয়েছে।