শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সংকটের মাঝেই চালু হচ্ছে আরেক কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৩৩ এএম, ৮ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার

ডলার সংকটের কারণে যখন দেশের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধুঁকছে, তখন আরও একটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে পটুয়াখালীতে নির্মিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। শুধু কেন্দ্র চালুর জন্য প্রয়োজনীয় গ্রিড বিদ্যুৎ (ব্যাকফিড পাওয়ার) সংযোগ বাকি। পিডিবি জানিয়েছে, আগামী ২২ ডিসেম্বর কেন্দ্রটিকে ব্যাকফিড পাওয়ার দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে উৎপাদনে আসতে পারবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার (আরএনপিএল)। যৌথ এই কোম্পানিতে রাষ্ট্রীয় রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশনের সমান সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট রয়েছে। পূর্ণ সক্ষমতায় কেন্দ্রটি চালাতে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার ২৭৩ টন কয়লা প্রয়োজন হবে। 

আরএনপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, সোমবার বিদ্যুৎ সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়েছে। সেখানে পিডিবি, পিজিসিবির কর্মকর্তারা ছিলেন। পিডিবি বলেছে, ২২ ডিসেম্বর আমাদের ব্যাকফিড পাওয়ার দেওয়া হবে। সেটি হলে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে কেন্দ্রটি প্রাথমিক উৎপাদনে যেতে পারবে। এরপরই বাণিজ্যিক উৎপাদন (কমার্শিয়াল অপারেশন) শুরু হবে।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এবং আরএনপিএলের প্রধান প্রকৌশলী মো. তৌফিক ইসলাম বলেন, কমিশনিং থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া থেকে তিন দফায় প্রয়োজনীয় কয়লা আনা হয়েছে সোয়া লাখ টনের বেশি। এরপর যে কয়লা লাগবে, তা আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে নেওয়া হবে। 

তৌফিক বলেন, আমতলীতে একটি সুইচিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। টেস্ট কমিশনিংয়ের জন্য জুন-জুলাইয়ে আমরা প্রস্তুত ছিলাম। এ জন্য পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনটি অন্তত আট দিন রাখতে হতো। বিসিপিসিএলের পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হতো। তখন দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা বেশি থাকায় পিডিবি বলেছিল আরও কিছুদিন পর কমিশনিং করতে। আমরা ১ নভেম্বর থেকেও সুযোগ চেয়েছিলাম। সর্বশেষ পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আমাদের সুযোগ দেওয়া হবে। 
প্রকৌশলী তৌফিক বলেন, আমাদের দ্বিতীয় ইউনিটও প্রস্তুত আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চের শুরুতে প্রথম ইউনিট এবং জুনের দিকে দ্বিতীয় ইউনিট চালু করা সম্ভব।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা  বলেন, আরএনপিএল ১ নভেম্বর থেকে ব্যাকফিড পাওয়ার চেয়েছিল। তবে আদানির বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকি, মাতারবাড়ী বন্ধ এবং রামপাল, বাঁশখালী থেকে সরবরাহ অর্ধেকে নামার প্রেক্ষাপটে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে এ মুহূর্তে তাদের ব্যাকফিড পাওয়ার দেওয়ার সুযোগ নেই। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এটি সম্ভব হবে।

সংকটে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র
বর্তমানে দেশে সরকারি, বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৫ হাজার ৯৯২ মেগাওয়াট। আরএনপিএল গ্রিডে যুক্ত হলে তা বেড়ে ৭ হাজার ৩১২ মেগাওয়াটে দাঁড়াবে। দেশে ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সমস্যায় পড়েছে। রামপাল ও এস আলমের এসএস পাওয়ারের উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। এমন সময় আরেকটি বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে সংকট বাড়তে পারে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তৌফিক ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই জটিল। টেস্টিং কমিশন থেকে সিওডি পর্যন্ত কয়লার ব্যবস্থা করা আছে। এরপর দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা হবে। নরিনকো এ ক্ষেত্রে অর্থায়ন করবে।’