মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একচ্ছত্র ক্ষমতার মসনদে ট্রাম্প

হাসান মাহমুদ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৭:১১ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার


 

 

  •    ডলারের কাছে পাউন্ড-ইউরোর দরপতন
  •    শেয়ার বাজার চাঙ্গা
  •    ২০জানুয়ারি শপথ


যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিপাবলিকান দলের নেতা ডনাল্ড ট্রাম্প নতুন ইতিহাস গড়লেন। ভোটের পাহাড় দেখে প্রতিপক্ষ শিবির রিতিমত বিস্মিত, হতবাক। একজন প্রবল শক্তিশালি ও জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে এই মুহূর্তে তাঁর বিকল্প কেউ নেই। প্রমাণ করতে পেরেছেন, জনতা তাদের ভালোবাসায় ডনাল্ড ট্রাম্পকে ভোটের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছেন। তিনি কতটা জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট তা ১৩২ বছরের ভোটের ইতিহাসকে ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচিত হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর যে নতুন সরকার গঠন হতে যাচ্ছে তাতে সিনেট এবং হাউজ রিপাবলিকানদের প্রভাব বলয়ের মধ্যেই থাকছে। কমালা হ্যারিস নির্বাচনে হেরে যাবার পাশাপাশি তাঁর ডেমোক্র্যাট দলের হাতে সিনেট এবং হাউজে কোন নিয়ন্ত্রণ থাকলো না। সেখানেও তারা পিছিয়ে পড়েছেন। ট্রাম্প সরকার এককভাবে আগামী কংগ্রেসে তাদের শক্তিশালি অবস্থান জাগিয়ে রাখতে পারবে পুরো মেয়াদকাল। সিনেটে ৫১ জন নির্বাচিত হলেই মেজরিটি পাওয়া যায়। সেখানে রিপাবলিকানরা ৫২টি আসন দখলে নিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছেন ৪৫টি। হাউজে রিপাবলিকানরা পেয়েছেন ২০৯ এবং  ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ১৯৪। এই ব্যবধানের কারণে ট্রাম্প সরকার এককভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। রাজ্যগুলোতে ডনাল্ড ট্রাম্প ২৯৫ এবং কমালা হ্যারিস ২২৬ ব্যবধানে ইতিহাস গড়েছেন। এর আগে ট্রাম্প ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিলারি ক্লিনটনকে নাটকীয়ভাবে পরাজিত করে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।  দুইজন নারী প্রার্থীকে পরাজিত করে ট্রাম্প এখন আলোচনার শীর্ষে। গত ৮ বছরের মধ্যে নির্বাচনের পর ডলারের দাম বাড়লো। পাউন্ড, ইউরোর দরপতন ঘটেছে।
সুসি ওয়াইলসকে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবে ঘোষণা করলেন ট্রাম্প। গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, ‘সুসি ওয়াইলস আমাকে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিজয় অর্জনে সহায়তা করেছে এবং আমার ২০১৬ ও ২০২০ সালের সফল প্রচারণার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। সুসি কঠোর, বুদ্ধিমান, উদ্ভাবনী এবং সর্বজনীনভাবে প্রশংসিত ও সম্মানিত। আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলতে সুসি অক্লান্ত পরিশ্রম চালিয়ে যাবেন।’
যুুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী, নভেম্বরের প্রথম সোমবারের পরদিন ‘মঙ্গলবার’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং জানুয়ারির ২০ তারিখে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবার বিধান। পরিকল্পনা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং আইনি ও পদ্ধতিগত সুরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও শপথ গ্রহণের মধ্যে কিছুটা সময়ের ব্যবধান রাখা হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল হিলে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন ট্রাম্প।
প্রতিপক্ষ প্রার্থী কমালা হ্যারিস ইতোমধ্যে তার পরাজয় মেনে নিয়েছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জু বাইডেন ডনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। গতবারের মতো নয়- এবার অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে বলে আশা করা হচ্ছে দুই শিবির থেকেই। ট্রাম্প তার সরকার গঠনের খসড়া ইতোমধ্যেই শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। ট্রাম্পের অন্যতম সমর্থক  টেসলার মালিক ইলন মাস্ককে গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে দায়িত্ব দেবেন বলে আভাস মিলেছে।
বিপুল জন সমর্থন আর ভালোবাসা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এ প্রত্যাবর্তনে মার্কিন শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বেড়েছে মার্কিন ডলার ও বিটকয়েনের মূল্য। গতকাল বৃহস্পতিবার গত আট বছরের মধ্যে একদিনে মার্কিন ডলারের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। সেই সঙ্গে রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে বিটকয়েনের দাম।
ট্রাম্পের জয়ের সংবাদ প্রচারের পরপরই নড়েচড়ে বসেছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শেয়ার ও মুদ্রাবাজার। সিংহভাগ ব্যাংকসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শেয়ার সূচক বেড়েছে। পাউন্ড, ইয়েনসহ বিভিন্ন বড় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে ডলারের বিপরিতে পাউন্ডের দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। ডলারের বিপরিতে ইউরোর দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক কমেছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ।
এদিকে বিটকয়েনের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বিটকয়েনের মূল্য ৬ হাজার ৬০০ ডলার বেড়ে ৭৫ হাজার ৯৯৯ ডলারে উঠেছে। এর মূল কারণ, ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বের বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির পরাশক্তি বানানোর’ প্রতিশ্রুতি বলে জানা যায়।