যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ৬ বাংলাদেশির জয়
আজকাল রিপোর্ট
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৭:৩৮ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ৬ বাংলাদেশি নির্বাচিত হয়েছেন। জর্জিয়া, কানেকটিকাট, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি প্লেইন্স বরো টাউনশিপ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তারা। ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি ঐতিহাসিক বিজয়ের স্বাদ পেয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ী বাংলাদেশিরা হলেন, কানেকটিকাট স্টেট সিনেটর মাসুদুর রহমান, জর্জিয়া স্টেট সিনেটর পদে ডেমোক্রাট প্রার্থী শেখ এম. রহমান ও একই স্টেটের আরেকটি ডিস্ট্রিক্ট থেকে সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত নাবিলা ইসলাম, নিউজার্সি প্লেইন্স বরো টাউনশিপের কাউন্সিলম্যান ড. নুরান নবী, নিউইয়র্কের কুইন্স কাউন্টি কমিটি মেম্বার পদে ড. আবু জাফর মাহমুদ ও নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান।
এ ছাড়া পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, নিউজার্সিসহ অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি-আমেরিকান কাউন্টি ও অন্যান্য পর্যায়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে তাঁদের ফলাফল এখনো জানা যায়নি।
নির্বাচিতদের মধ্যে পঞ্চম মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন কাউন্সিলম্যান ড. নুরান নবী। তিনি নিউজার্সি প্লেইন্স বরো টাউনশিপ থেকে প্রথম নির্বাচিত হন ২০০৭ সালে। এরপর টানা ১৪ বছর ধরে এ পদে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এ ছাড়া ৬ বারের মতো নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবুল বি খান (রিপাবলিকান)।
আবুল খান বলেন, ‘আমি খুবই আপ্লুত। মানুষ আমাকে ছয়বারের মতো সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করেছে। আমি রিপাবলিকান থেকে পাশ করলেও এখন আমি সর্বস্তরের, সব দলের মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করব। আমাদের সরকার সব সময়ই কর না বাড়ানোর পক্ষে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতির পক্ষে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করব।
কিশোরগঞ্জের সন্তান শেখ মুজাহিদুর রহমান চন্দন টানা চতুর্থবারের মতো জর্জিয়ার ডিস্ট্রিক্ট-ফাইভ থেকে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী লিসা ব্যাবেজের চেয়ে তিনি ৭০ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছেন। তিনিই হচ্ছেন সেখানকার প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ও জর্জিয়ার প্রথম মুসলিম আইনপ্রণেতা।
সরারচরের বীর মুক্তিযোদ্ধা নজিবুর রহমানের ছেলে চন্দন ১৯৮১ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। জর্জিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ৬৩ বছর বয়সি চন্দন টানা চতুর্থবারের মতো জয়ের মালা পরে প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
নিউইয়র্কের কুইন্স কাউন্টি কমিটির মেম্বার পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি আমেরিকান রাজনীতিবিদ স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন তিনি মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস গঠন করে নতুন উদ্যোমে রাজনীতিতে অগ্রসর হয়েছেন।
চলতি বছরের ২৫ জুন অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেট প্রাইমারি নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন তিনি । এর আগে ৫ মে জ্যাকসন হাইটস এর ডাইভার্সিটি প্লাজায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে কুইন্স কাউন্টি কমিটির সদস্য পদে তার প্রার্থীতা ঘোষণা করেন নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা।
পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেসের প্রেসিডেন্ট স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ জানিয়েছেন, তার এ অর্জন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের একটি আনুষ্ঠানিক অধ্যায় । তিনি বলেন, যারা এতদিন বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অবদান রেখেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা এখন দৃপ্তস্বরে , স্বগৌরবে বলতে পারবেন ডেমোক্রেটিক নিবার্চনে আমরাও মূলধারার নেতৃত্বে অংশীদার।
তিনি জানান, কুইন্স কাউন্টি কমিটির মেম্বার পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তার জয়লাভের বিষয়টি একটা ইতিহাস ও একই সঙ্গে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এর কৃতিত্বের দাবিদার কমিউনিটির সকল মানুষ।
৫ নভেম্বর ২০২৪ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের দিন জ্যাকসন হাইটস এর ডাইভার্সিটি প্লাজায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল গণনার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে তার জয়লাভের ঘোষণা দেন কুইন্সের জনপ্রিয় কাউন্সিল মেম্বার শেখর কৃষ্ণান। তিনি বলেন, আবু জাফর মাহমুদ শুধু বাংলাদেশের মানুষের কমিউনিটি নেতা নন, তিনি দক্ষিণ এশিয়া তথা বৃহত্তর আমেরিকান কমিউনিটির জন্য এক অসাধারণ নেতৃত্বের সাক্ষর গড়েছেন।
১৯৪৮ সালের এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরের তীরে জন্ম নেওয়া আবু জাফর মাহমুদ নিউ ইয়র্কে হোম কেয়ার সেবার পথিকৃৎ। তিনি বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস এবং অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার ইনকর্পোরেটেড এর প্রেসিডেন্ট এবং সিইও। তিনি নিউইয়র্ক রাজ্যে হোম কেয়ার শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, অসংখ্য প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধীদের উচ্চমানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নত করেছেন। পেশাগত সাফল্যের বাইরেও তিনি প্রবাসী বাংলাদেশি এবং অন্যান্য অভিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় এক অবিচল সংগ্রামী।
আবু জাফর মাহমুদ মহান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মাউন্টেন ব্যাটালিয়নের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি দেশের দলীয় রাজনীতির পথ পরিহার করে রাজনীতিচর্চা ও মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। একই সঙ্গে তিনি মনোনিবেশ করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সমরনীতি বিষয়ক গবেষণায়।