‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে বড় প্রভাব পড়বে না’
মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৭:৪৬ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বড় প্রভাব পড়বে না। ওয়াশিংটনের স্বার্থ সুরক্ষায় অভিন্ন বিষয়গুলোতে প্রায় এক রকম অবস্থাই থাকবে। তবে ট্রাম্পের কিছু প্রবণতা সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে রাজনীতি ও কৌশলগত দিকের চেয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ তথা অর্থনৈতিক দিকগুলোর প্রতি তার আগ্রহ থাকবে বেশি। আগেরবার ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অধিত শুল্কারোপ করলে মার্কিন বাজারে বিকল্প হিসাবে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা বাড়তে পারে। ফলে ট্রাম্পের সময়টা বাংলাদেশের বাণিজ্যের জন্যে ইতিবাচক হতে পারে। রাজনীতির ক্ষেত্রে সম্পর্কের ধরণ কী হবে সেটা বোঝার জন্যে এখনও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।
শেখ হাসিনার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ ছিলো। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় যাবার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কারণ হিলারি ক্লিনটনসহ মার্কিন প্রশাসনের অনেকের সঙ্গে ইউনূসের সম্পর্ক ভাল। তবে তারা বেশিরভাগই ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রিপাবলিকান অনেক নেতার সঙ্গে ইউনূসের ভাল সম্পর্ক আছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ট্রাম্পের আমলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও ভাল হবে। বিশ^ নেতাদের সঙ্গে ইউনূসও ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাংলাদেশের বর্তমান অর্ন্তব্তীকালীন সরকারের সঙ্গে জো বাইডেন সরকারের যে সম্পর্ক ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় সেই উষ্ণ সম্পর্ক খুব বেশি থাকবে বলে মনে হয় না। এর কারণ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডেমোক্র্যাট দলীয় হিলারি ও বিল ক্লিনটনের সঙ্গে সৌহার্দ ও বন্ধুত্ব ছিল। এই ধারাবাহিকতা জো বাইডেনও বজায় রেখেছিলেন। ড. মোহাম্মদ ইউনূস অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণের পর বাইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সুন্দর সম্পর্ক বজায় রেখেছে। অনেকে মনে করছেন ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কিছুটা ছন্দপতন হতে পারে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন হলেও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে তেমন পরিবর্তন হয় না। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। যুক্তরাষ্ট্র সেই সম্পর্ক আরও গভীর করার চেষ্টা চালাবে। বাংলাদেশের এখন ওয়েট অ্যান্ড সি অর্থাৎ অপেক্ষা করা এবং দেখা ছাড়া আপাতত কিছু করার নেই।
নির্বাচনের আগে ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় কড়া ভাষায় বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা কমবেশি আলোচনা হলেও সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। বর্তমান সরকার তাকে ফেরত এনে আইনের মুখোমুখি করবে। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে, ট্রাম্প সেটি স্বীকার করেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশের অর্ন্তর্র্বতী সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় ফেরায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের তাগিদ থাকবে। গত ২ সপ্তাহে আমরা দেখেছি যে তারা বাংলাদেশের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা চাচ্ছিল। সেই কারণে আমার মনে হয় রিপাবলিকান পার্টি বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পার্টির একটা তাগিদ থাকবে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে।
ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চেষ্টা করবে। এই কারণে হয়তো আমরা যে উৎসাহটা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের ব্যাপারে সেটা হয়তো ভাটা পড়বে বা অতটা উৎসাহ থাকবে না। তার (ডোনাল্ড ট্রাম্প) দিক থেকে চায়না, ভারত ও রাশিয়ার মতো বড় দেশগুলোর বিষয়ে ব্যস্ত থাকবে। সেই জায়গায় হয়তো বাংলাদেশ যে অ্যাটেনশনটা চেয়েছিল সেটা নাও পেতে পারে। তাই আমাদের ওপর কী প্রভাব পড়বে সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে আমি মনে করি যে তারা হয়তো তাড়াতাড়ি রোডম্যাপ দেখতে চাইবে বা কবে বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার হতে যাচ্ছে জানতে চাইবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গণতান্ত্রিক চর্চা নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে যথেষ্ট সমালোচনা ছিল। ট্রাম্প সেই বিষয়টা সামনে আনবে না বরং চেষ্টা থাকবে একটা অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করতে। এখন অপেক্ষা করতে হবে যে এটা (ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন) হলে তার কী প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের ওপর পড়বে।
যেহেতু সে (ডোনাল্ড ট্রাম্প) ইউক্রেনের যুদ্ধের ব্যাপারে খুবই স্পষ্ট ছিল এবং থামানোর ব্যাপার বারবার বলেছে সে থাকলে যুদ্ধ হতো না সেই জায়গায় একটা বড় পরিবর্তন আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে আমার মনে হয় একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রাতিষ্ঠানিক রাষ্ট্র। এটি ব্যক্তিনির্ভর কোনো রাষ্ট্র নয়। এখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে জানান তিনি। বুধবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ট্রাম্প রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক একই থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বৈশ্বিক শক্তি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তারা বড় রাষ্ট্রগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে রাশিয়া, চীন ও ভারত এসব দেশগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হওয়ার মতো তেমন কিছু দেখছি না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর অভিবাসী নীতি নিয়ে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশ একটু চাপে পড়বে। কারণ, বাংলাদেশের অনেকেই অবৈধভাবে আছেন। আবার অনেকেই এখনো নাগরিকত্ব পাওয়ার পর্যায়ে রয়েছেন।
নির্বাচনি প্রচারের সময়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে টুইট করেছিলেন, জেতার পরও সেই অবস্থান থাকবে কিনা এ বিষয়ে নাসিমা হায়দার বলেন, ওই টুইটটি তার নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হতে পারে। এর বাইরে যদি চিন্তা করি, তাহলে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে আমেরিকা ছোটখাটো স্টেটমেন্ট দিতে পারে। এর বাইরে হস্তক্ষেপ করবে না। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারত অফিশিয়ালি হিন্দু রাষ্ট্র না হলেও সেখানে হিন্দু সম্প্রদায় সংখাঘরিষ্ঠ। এ কারণে ভারতকে এ বিষয়ে নজর রাখতে ট্রাম্প বলতে পারেন।
সেন্টমার্টিন নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে বর্তমান সরকারের কি হয়েছে তা আমরা নিশ্চিত নই। হাইপোথেটিক্যালি যদি ধরে নেই, সেন্টমার্টিন নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে আমেরিকার কিছু একটা হয়েছে। ট্রাম্প জয়ী হওয়ায় এ বিষয়ে তিনি আগ্রহ দেখাতে পারেন, আবার নাও পারেন। সেন্টমার্টিনের বিষয়ে হয়তো রিপাবলিকানরা আপডেটেড না। ##