অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৭:৪৮ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার
অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত
নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণ পর্যন্ত অর্ন্তবর্তকালীন সরকারের মেয়াদ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণের দিন পর্যন্ত বর্তমান অর্šÍবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা আগের মতোই। উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ পাবেন না ২৫ বছরের কম বয়সিরা। পাশাপাশি অর্šÍবর্তীকালীন সরকারের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্নও তোলা যাবে না। জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে সরকার- এমন বিধান রেখে অর্šÍবর্তীকালীন সরকারকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা হয়েছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর অর্šÍবর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদ এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি হতে পারে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়ার পর অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। চূড়ান্ত হলে নিয়মানুযায়ী অধ্যাদেশ আকারে আদেশ জারি করা হবে।
সংশি¬ষ্ট সূত্র বলছে, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অর্ন্তভুক্ত করে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ গত ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এর মাস দেড়েক পরেই ৩০ জুন সংসদে গৃহীত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অর্šÍবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। তবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হওয়ায় বর্তমানে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক বা অর্šÍবর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা এবং প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা পরিষদ বলে কিছুই নেই।
এ কারণে অর্šÍবর্তীকালীন সরকারের আইনি ভিত্তি নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য গত ১৯ সেপ্টেম্বর অর্šÍবর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
অধ্যাদেশে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের মতোই অর্šÍবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও এখন উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না।
আইন ও বিচার বিভাগ থেকে প্রণীত অধ্যাদেশের খসড়ায় অর্šÍবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ সংক্রন্ত ধারায় বলা হয়েছে, যে তারিখে প্রধান উপদেষ্টা অর্šÍবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, সেই তারিখ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী তার কার্যভার গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত অর্šÍবর্তীকালীন সরকার বহাল থাকবে। এর আগে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মেয়াদ ছিল ৯০ দিন।
চূড়ান্ত খসড়া অধ্যাদেশে অর্šÍবর্তীকালীন সরকারের কাজ কী হবে- এ সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, অর্šÍবর্তীকালীন সরকার একটি অস্থায়ী বা সাময়িক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন নিয়ে নির্ধারিত স্থায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে।
আরও বলা হয়েছে, সংবিধান এবং আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অর্šÍবর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়া এবং নতুন সংসদ গঠিত হইবার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাহার পরে কার্যভার গ্রহণ করিবেন, সেই তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যবর্তী সময়ে অর্šÍবর্তীকালীন সরকার কর্তৃক প্রয়োগকৃত সব ক্ষমতা, প্রণীত সব অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, জারিকৃত প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত আদেশ, কৃতকার্য, গৃহীত ব্যবস্থা আইনানুযায়ী যথাযথভাবে প্রয়োগকৃত, প্রণীত, জারিকৃত, প্রদত্ত, কৃত এবং গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টসহ অন্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ ইহাদের বৈধতা সম্পর্কে কোনোভাবেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন কিংবা ইহাদেরকে অবৈধ বা বাতিল করিতে পারিবে না।
আরও বলা হয়, অর্šÍবর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশের অধীন গঠিত অর্šÍবর্তীকালীন সরকার গঠন, প্রধান উপদেষ্টা বা কোনো উপদেষ্টাদের নিয়োগ নিয়ে ত্রুটি থাকলে সেজন্য কোনো কাজ অবৈধ হবে না, এজন্য কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা দায়েরও করা যাবে না।
নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বিদ্যমান অন্যান্য আইনে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন, অর্šÍবর্তীকালীন সরকারের সময় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে কাজ করতে হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে হবে।