বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ৩০ ১৪৩১   ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হেরে কাদা ছোড়াছুড়ি ডেমোক্র্যাটদের

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৬:৩১ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২৪ রোববার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আভাস ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের। কিন্তু ভোট শেষে দেখা গেল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেননি কমলা হ্যারিস। ট্রাম্পের কাছে কমলার এমন পরাজয় নিয়ে হচ্ছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। বিভিন্ন জনের বিশ্লেষণে উঠে আসছে ভিন্ন ভিন্ন কারণ। তবে খোদ ডেমোক্র্যাটদের অনেকে বলছেন, কমলার হারের নেপথ্যে বড় কারণ ছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অবশ্য কারও কারও ভিন্ন মতও আছে। তাদের ভাষ্য, কমলা ভোটারদের সামনে নিজেকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেননি বলেই তার ভরাডুবি হয়েছে।

বিবিসি বলছে, কমলার পরাজয়ের জন্য বাইডেনকে দোষারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যদি বাইডেন নির্বাচন থেকে আগে সরে দাঁড়াতেন, তাহলে ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করতে পারত। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে কমলা জিততেন বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রত্যাশা ছিল যে, প্রেসিডেন্ট সরে দাঁড়ালে উন্মুক্ত প্রাইমারি হবে।

উন্মুক্ত প্রাইমারিতে কয়েক মাস ধরে প্রচারণা ও বিতর্কে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করার সুযোগ পায় দল। সাধারণত ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করলে দল প্রাইমারির আয়োজন করে না এবং সে কারণে জো বাইডেন যখন দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন করার ঘোষণা দেন তখন তার দল আর অন্য কাউকে আর বিবেচনায় আনেনি। নির্বাচনের চার মাস আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্ক বিপর্যয়ের পর বাইডেন যখন সরে দাঁড়ান, তখন দল দ্রুত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রার্থী করতে একমত হয়।

সে সময় দ্রুত হ্যারিসকে এনডোর্স বা প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করেছিলেন জো বাইডেন। ন্যান্সি পেলোসি তারও সমালোচনা করেছেন। যদিও একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, তখন আর প্রাইমারি আয়োজন করা সহজ ছিল না।

২০২০ সালের মতো এবারের নির্বাচনেও বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে লড়াই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বিতর্কে খারাপ করার পর দলের চাপে গত জুলাইয়ে নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বাইডেন। এরপর কমলা হন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল পেলোসির।

রিপাবলিকান ট্রাম্পের কাছে কমলার হারের জন্য পেলোসি ছাড়াও অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা বাইডেনকে দোষারোপ করছেন। আর কমলা হ্যারিসের উপদেষ্টারাও হারের জন্য বাইডেনকে দায়ী করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমলার বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা বলছেন, নির্বাচনের প্রচারে কোনো কমতি রাখা হয়নি। কিন্তু প্রচারের জন্য সময় পাওয়া গেছে অল্প। বাইডেন যদি আরও আগে সরে দাঁড়াতেন, তাহলে ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য বেশি সময় পাওয়া যেত। এই উপদেষ্টাদের একজন বলেন, গত মঙ্গলবারের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস ও ডেমোক্র্যাটদের হারের নেপথ্যে একমাত্র কারণ বাইডেন।

যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাইডেনের একজন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনে হারের পেছনে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টাদের দায় রয়েছে। কারণ, বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলে উসকানি দিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হোন, তা চাননি সাবেক এই প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টারা। এর প্রভাব পড়েছে নির্বাচনের ফলাফলে।

তবে বাইডেন-ঘনিষ্ঠরা বলছেন অন্য কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাইডেনের একজন সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে হার নিয়ে হ্যারিস ও তার সমর্থকরা এখন অজুহাত দিচ্ছেন। নির্বাচনের প্রচারে ট্রাম্পের তুলনায় বিপুল অর্থ ব্যয় করেও কেন সুফল পাওয়া গেল না সেই প্রশ্ন তার।

পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ও ডেমোক্র্যাট নেতা জন ফেটারম্যান অবশ্য মনে করে বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রকারীরাই নির্বাচনে হারের জন্য দায়ী। তিনি বলেন, ‘তারা বাইডেনকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। তাদের চাওয়া অনুযায়ী নির্বাচনও হয়েছে। এখন নির্বাচনের ফল যেটা এসেছে আর দলের যে বিপর্যয় হয়েছে, তা মেনে নেওয়াই যথোপযুক্ত।