শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পোস্টারে ঢেকে যাচ্ছে প্রাণের গ্রাফিতি

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪৫ এএম, ১২ নভেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার

  ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পালানোর পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেয়াল ও পিলারে গ্রাফিতি এঁকেছে শিক্ষার্থীরা। জুলাই বিপ্লবে শহীদ ছাড়াও গ্রাফিতিতে স্থান পেয়েছে ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতি, রাষ্ট্র সংস্কারসহ বিভিন্ন উক্তি ও স্লোগান। তবে জুলাই বিপ্লবের তিন মাসের মধ্যে সেই হৃদয়ছোঁয়া গ্রাফিতিগুলো ঢেকে যাচ্ছে রাজনৈতিক দল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পোস্টারে। একই সঙ্গে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যানারও।

গত ৫ আগস্টের পর রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নিউ বেইলি রোড, মিন্টো রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্রাফিতি আঁকে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু ভবনের দেয়াল, সীমানাপ্রাচীর, সড়কদ্বীপ, মেট্রোরেলের স্তম্ভ, উড়ালসড়কের স্তম্ভে গ্রাফিতি এঁকেছেন শত শত শিক্ষার্থী। তারা নিজেরাই অর্থ জোগাড় করে রং ও আঁকার সরঞ্জাম কিনে গ্রাফিতি লেখাসহ নানা পঙ্ক্তি লিখেছেন। এসব গ্রাফিতিতে অভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধার পাশাপাশি উঠে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি, সমাজ-রাষ্ট্রের সংস্কার, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করা, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, বাকস্বাধীনতা, সমঅধিকার থেকে শুরু করে সব রকমের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর প্রতিরোধের অগ্নিময় উক্তি। এসেছে বহু কালজয়ী গান ও কবিতার লাইন। আছে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের কথাও।
সরেজমিন দেখা গেছে, মৌচাক মোড়ে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের পিলারে জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া মুগ্ধর ‘পানি লাগবে পানি’-সংবলিত বাণী ছিল। এর পাশে ‘আমি তুমি আমরা’ নামে গ্রাফিতি আঁকা আছে। কিন্তু এই দুটি লেখার অনেকটা ঢেকে গেছে রাজনৈতিক দলের পোস্টারে। মৌচাক মোড় থেকে মালিবাগ যেতে দ্বিতীয় নম্বর পিলারে একটা গ্রাফিতিকে ঢেকে দিয়েছে একটি ইংরেজি শিক্ষার কোচিং সেন্টারের ব্যানার। এর পরের পিলারে ‘দেশকে ভালোবেসে আগলে রাখুন’ লেখা-সংবলিত গ্রাফিতির ওপরে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। আরেক পাশে ‘পানির অপর নাম মুগ্ধ’ লেখার ওপরে কোচিং সেন্টারের পোস্টার রয়েছে। মালিবাগ মোড়ে পিলারে আরবি লেখা-সংবলিত গ্রাফিতির ওপর পোস্টারে সাঁটানো হয়েছে। শুধু এই পিলারগুলোই নয়, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের অধিকাংশ পিলার রাজনৈতিক দলের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। একই সঙ্গে হানিফ ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলের পিলারসহ গ্রাফিতি আঁকা দেয়ালে রাজনৈতিক, কোচিং সেন্টার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পোস্টার লাগানো হয়েছে। এদিকে রাজধানীতে সব পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করতে নেতা-কর্মীদের কড়া নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। গত শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর উত্তরের আওতাধীন সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস, ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টারসহ সব ধরনের বিল বোর্ড অপসারণ করার জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক এবং সদস্য সচিব মোস্তফা জামান নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী তিন দিনের মধ্যে এসব পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন স্থানে লাগানো সব ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারসহ সব ধরনের বিল বোর্ড আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করার জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বিএনপি থেকে কঠোর নির্দেশনা দিলেও এর বাস্তবায়ন কোথাও দেখা যায়নি। ফ্লাইওভারের পিলার, মেট্রোরেলের পিলার, দেয়ালসহ বিভিন্ন স্থানে এখনো পোস্টার ব্যানার দেখা যায়। এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছিম আহমেদ বলেন, গ্রাফিতির ওপর এবং ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার, ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। এগুলো আমাদের নজরে এসেছে। তবে বিএনপি থেকে নির্দেশনা দিয়েছে এগুলো অপসারণের জন্য। ওরা যদি অপসারণ না করে তাহলে আমরা উদ্যোগ নিয়ে অপসারণ করব।