শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাগজপত্রহীন বাংলাদেশিসহ কোটি অভিবাসী আতংকিত

হাসান মাহমুদ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:০৪ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার

 

  •     কঠোর অভিবাসন নীতি আসছে
  •    স্বেচ্ছায় ডিপোর্ট হবার আহবান হোম্যানের


ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হবে আগামী ২০ জানুয়ারি, ২০২৫। ‘কাজগপত্র’ নেই এমন অভিবাসিদের বিরুদ্ধে প্রথমদিন থেকেই ট্রাম্প তার সরকারের সবচেয়ে বড় অভিযান কর্মসূচি নিয়ে ড্রাইভ দিতে যাচ্ছেন । এই কর্মসূচিতে সন্তান জন্ম দিয়ে নাগরিকত্ব পাবার পথ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পর ট্রাম্প এখন দ্রুত তাঁর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ সম্পন্ন করছেন। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছেন ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বা আইস-এর প্রধান টম হোম্যান। তিনি অনিবন্ধিত বা অবৈধ অভিবাসিদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আপনি স্বেচ্ছায় ডিপোর্ট হোন। তা না হলে আমরা জানি আপনি কে।’ টম হোম্যান ফক্স নিউজে উপস্থিত হয়ে বলেছেন, পরবর্তী প্রশাসনের পরিকল্পিত অভিবাসন অভিযানে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের ‘স্বেচ্ছায় নির্বাসন’ করা উচিত। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি  নিজ থেকে নির্বাসন চান, তা হলে আপনাকে  স্বেচ্ছায় নির্বাসিত হওয়া উচিত।  আমরা জানি আপনি কে, এবং আমরা এসে আপনাকে খুঁজে বের করব।’
নিবন্ধন পাননি এমন পরিবারের মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে ভিতি ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, তাদের জানা নেই দীর্ঘদিন থাকার পরও ‘কাগজ’ না পাবার কারণে এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন! অন্য কমিউনিটির মতো বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যেও প্রতিদিন নানা আলোচনা, গুঞ্জন, ভিতি চলমান আছে আসন্ন কঠোর অভিবাসন নীতি সম্পর্কে। ট্রাম্প সরকারের অবৈধ অভিবাসন বিরোধি এই কর্মসূচি পরিচালনা করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরে এক মিলিয়ন অনিবন্ধিত অভিবাসীদের ডিপোর্ট করতে ব্যয় হবে ৮৮ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প জয়লাভের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ লাখ কাগজপত্রহীন বাংলাদেশি সহ ১ কোটি ২০ লাখ অভিাসী শংকার মধ্যে বসবাস করছেন। ট্রাম্প শপথ এখনও নেননি। কিন্তু আতংকিত অভিবাসীরা কাজে যেতেও ভয় করছেন। কর্মস্থলেও অবৈধদের ধরতে হানা দেয়া হবে বলে নতুন আএসই প্রধান হুঁসিয়ারী উচ্চারন করেছেন।
অবৈধ অভিবাসিদের ডিপোর্ট করার বেশ কয়েকটি পরিকল্পনার কথা হোম্যান ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছেন। এছাড়া পরিবারের কাছ থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েও তিনি তাঁর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। যে সকল বাবা বা মায়ের বৈধ গ্রিণকার্ড বা পাসপোর্ট নেই তাদের শিশুদের পরিবার থেকে আলাদা করার কথাও বলা হচ্ছে। নিয়োগ পাবার পর  থেকে সাধারণ জনগণের মধ্যে ইতোমধ্যে ‘টম হোম্যান’ ভিতি ছড়িয়ে পড়েছে বলে অনেক অভিবাসি জানিয়েছেন। অনেক বাংলাদেশি অভিবাসি আছেন যারা এখনো কোন বৈধ কাগজ পাননি। তারা পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন বলে জানা গেছে। তারা আশঙ্কা করছেন ‘আইস’ কর্মকর্তারা যদি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করতে শুরু করে তবে কর্মসংস্থান সংকুচিত হতে পারে।
হোম্যান গত ট্রাম্প প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স’ প্রয়োগের সময় আইসিই-এর তত্ত্বাবধান করেছিলেন যা সীমান্তে পিতামাতাকে তাদের সন্তানদের থেকে আলাদা করেছিল। এক সাক্ষাৎকারে হোম্যান বলেন, ‘ভবিষ্যতে পারিবারিক বিচ্ছেদ বিবেচনা করা দরকার, পরিবারগুলিকে একসাথে নির্বাসিত করা যেতে পারে।’
অভিবাসন একটি শীর্ষ ইস্যু হিসাবে ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি আইনী অনুমতি ছাড়া বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ অভিবাসীকে আটক করতে এবং নির্বাসনে বদ্ধপরিকর। নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে তাঁর সমাবেশের সময় তিনি ‘প্রথম দিনে’ গণনির্বাসন কার্যকর করার প্রচারণার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘প্রথম দিনেই আমি অপরাধীদের বের করে আনার জন্য আমেরিকার ইতিহাসের বৃহত্তম নির্বাসন কর্মসূচি চালু করব। আমি প্রতিটি শহরকে উদ্ধার করব যা আক্রমণ করা হয়েছে এবং আমরা এই দুষ্ট ও রক্তপিপাসু অপরাধীদের জেলে পাঠাব, তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বের করে দেব।’ সেই নীতিগুলি বাস্তবায়ন করার জন্য আনুমানিক ১ কোটি ১০ লক্ষ অনিবন্ধিত অভিবাসীকে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত নীতি অনুযায়ি নির্বাসনে পাঠানো হবে। হোম্যান ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘সীমান্ত জার’ হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন। বিশেষত তার অফিসে প্রথম মুহূর্ত থেকেই ‘দ্রুত অপারেশন’ পরিচালনা করার ইচ্ছার কথা বিবেচনা করছেন তিনি।
হোম্যান বলেন, অপরাধী ও গ্যাংয়ের সদস্যরা কোনও গ্রেইস পিরিয়ড পায় না। যখন আমরা জননিরাপত্তার হুমকি এবং জাতীয় নিরাপত্তার হুমকিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি, তারপর তিনি যোগ করেন, সুতরাং আপনি যদি  স্বেচ্ছায় নির্বাসন চান, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু অপরাধী ও চক্রের সদস্যরা, তারা এই প্রশাসনের কাছ থেকে কোনও সুবিধা পাবে না। আপনি অবৈধভাবে এই দেশে এসেছেন, যা একটি অপরাধ। আপনি মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছেন, কিছু জঘন্য অপরাধ করেছেন। আপনি কোনও গ্রেস পিরিয়ড পাবেন না। তাই আমরাই আপনার কাছে আসছি।’ এর আগে হোম্যান কংগ্রেসকে বলেছিলেন যে, দেশে যারা অবৈধভাবে রয়েছে তাদের ‘ভয় পাওয়া উচিত’।