শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারতকে বাংলাদেশ:হাসিনাকে থামান

আজকাল রিপোর্ট

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:০৮ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার


 

ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনার বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য-বিবৃতিকে ভালো চোখে দেখছে না সরকার। এমনটাই জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মো. তৌফিক হাসান। গতকাল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিকবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ও ভারতীয় সরকারকে বিষয়টি জানিয়েছে। তাদের স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে যে রাজনৈতিক বিবৃতি ও বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটি বাংলাদেশ সরকার ভালোভাবে দেখছে না। এ ব্যাপারে সরকারের তীব্র অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। তৌফিক বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সেটির জন্য এ ধরনের বক্তব্য থেকে তাকে বিরত রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের জবাব কি? জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, আমরা যখন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছি, তখন তিনি বলেছেন, বিষয়টি তার সরকারের কাছে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে জানাবেন। আমরা আসলে সত্যিকার অর্থে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জবাব পাইনি। তারা বিষয়টি দেখবেন এরকম জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং তাকে ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন করানো হবে কিনা? এ প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমাদেরকে যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, তখন আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবো। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এমন বিষয় নিয়ে কোনো অনুরোধ পায়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও এমপি ভারতে অবস্থান করছেন-সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কিনা? মুখপাত্র বলেন, না এ নিয়ে কোনো তথ্য নেই। ভারতের ভিসা পাওয়া সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে পররাষ্ট্রের মুখপাত্র বলেন, বিষয়টি আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বারবার বলে আসছি এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে তাদের লোকবল সংকটের কথা জানিয়েছে। স্বাস্থ্য ভিসা এবং তৃতীয় দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা প্রত্যাশীদের বিষয়টি যেন তারা দ্রুততার সঙ্গে বিবেচনা করেন সেটি আমরা তাদের বলেছি। সেই সঙ্গে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং ফিনল্যান্ডে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়া সহজ করার অনুরোধ করেছি।
অপর প্রশ্নে তৃতীয় দেশের ভিসাপ্রার্থীরা দিল্লির পরিবর্তে ভিয়েতনাম এবং পাকিস্তান থেকে ভিসা গ্রহণ করতে পারবেন বলে জানান মুখপাত্র মিস্টার হাসান।

কূটনীতিকদের নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা অত্যন্ত দুঃখজনক: এদিকে সমপ্রতি সামাজিক গণমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে কূটনীতিকদের নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মো. তৌফিক হাসান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমপ্রতি দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত বা বিভিন্ন কূটনীতিক, যারা রাষ্ট্রদূত হতে যাচ্ছেন- তাদের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা হচ্ছে। এটি খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, ২০-২৫ বছর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পরে একজনকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং যোগ্য না হলে সরকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয় না বলে তিনি জানান। মুখপাত্র  বলেন, রাষ্ট্রদূতদের বিষয়ে এ ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা যারা করছেন- তারা ভালো কাজ করছেন না। এটি আসলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের নেতিবাচক ভাবমূর্তি বিদেশে তুলে ধরছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংস্কারের বিষয়ে তিনি জানান যে, অবসরে যাচ্ছেন অথবা অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক কিন্তু রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন- তাদের মেয়াদ আর বর্ধিত করা হচ্ছে না। ডিসেম্বরে ৭-৮ জন কূটনীতিক অবসরে যাচ্ছেন। তাদের কারও মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে না।

উপদেষ্টা হেনস্তায় কাউন্সেলর কামরুল ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’: ওদিকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে হেনস্তার ঘটনায় সেখানকার বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কাউন্সেলর মুহাম্মদ কামরুল ইসলামকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে মুখপাত্র। বলেন, সেই সঙ্গে ওই মিশনে স্থানীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়া এক কর্মীকেও চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র তৌফিক হাসান বলেন, সুইজারল্যান্ডে জেনেভা মিশনের বিষয়ে যেটি আপনারা জেনেছেন, এটি একটি খুবই অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা। যে কারণে কিন্তু অলরেডি অ্যাকশন নেয়া হয়েছে, আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন যে, এ ঘটনায় যারা জড়িত, আমাদের মিশনের একজন অফিসার এবং স্টাফ মেম্বার- তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু অলরেডি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। দূতাবাসের প্রটোকলে তিনি গাড়িতে করে জেনেভা বিমানবন্দরে পৌঁছান। গাড়ি থেকে নামার পর হঠাৎ একদল লোক এসে তাকে ঘিরে ধরে হেনস্তা করে। এ সময় আসিফ নজরুলের সঙ্গে ছিলেন জেনেভা মিশনের শ্রম কাউন্সেলর কামরুল ইসলাম ও মিশনের স্থানীয়কর্মী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত মিজান। উপদেষ্টার প্রতি ওই ব্যক্তিরা চড়াও হলেও তারা দু’জনই চুপ ছিলেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ২০২১ সালে জেনেভা মিশনে যোগ দেন। উপ-সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা এর আগে প্রবাসীকল্যাণ সচিবের একান্ত সচিব ছিলেন। আসিফ নজরুলের সূচি বাইরে ‘জানাজানি’ হওয়া এবং বিদেশে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন ঘটনা এড়াতে বিদেশি মিশনগুলোতে নির্দেশনা দেয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক বলেন, সবগুলো মিশনে আমরা নির্দেশনা পাঠিয়েছি যে, ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রটোকল এবং সিকিউরিটির ক্ষেত্রে যেন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।