রোববার   ১৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩১   ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাসের চাঁদা বেড়ে ৭ গুণ!

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫৭ এএম, ১৭ নভেম্বর ২০২৪ রোববার

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বাস চালাতে আটটি স্থানে চাঁদা দিতে হচ্ছে চালকদের। আগে চাঁদার পরিমাণ যা ছিল সম্প্রতি রুটের কোনো কোনো স্থানে তা দ্বিগুণ হয়েছে। বাস মালিক সমিতি ও সড়ক পরিবহন গ্রুপের নামে এ চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এতে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসশ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বাস থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের প্রশাসক ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তরফদার আক্তার জামীল বলেন, ‘আমি সম্প্রতি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি। কোথায় কী পরিমাণ চাঁদা তোলা হয় সেটা জানি না। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আমি বাস মালিক সমিতির সদস্যদের ডেকেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে কেন চাঁদা তোলা হয় তা জেনে মন্তব্য করব।’

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে কমিটি বিলুপ্ত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নিয়োগ করা হয় প্রশাসক। তার পরও বাস মালিক সমিতির নামে টাকা ওঠানো হচ্ছে। উত্তোলিত টাকা কাউন্টার মাস্টারদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয় বলেও অভিযোগ। হিসাব করে দেখা গেছে, আগে এ রুটে একটি বাস এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ঢুকতে ৫৯০ টাকা চাঁদা দিত। ফিরতি পথে দিতে হতো আরও ৫৯০ টাকা। এ হিসাবে আদায় হতো ১ হাজার ১৮০ টাকা। যদিও আসা-যাওয়ায় ১২০ টাকা হারে মাত্র ২৪০ টাকা দেওয়ার কথা। এখন গুণতে হচ্ছে ১ হাজার ৭২০ টাকা। পট পরিবর্তনের পর এ রুটে চাঁদা বেড়েছে ৫৪০ টাকা। নির্ধারিত হারের হিসাবে এ বৃদ্ধি সাত গুণের বেশি!
এদিকে, বাড়তি টাকা উত্তোলনের অভিযোগ সত্যি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন গ্রুপের পক্ষে সম্প্রতি বাড়তি টাকা আদায় হচ্ছে। এ টাকা আমাদের শ্রমিকরা পায় না। সব টাকা বাস মালিক সমিতি নেয়। অথচ বর্তমানে মালিক সমিতির কোনো কমিটিই নেই। প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন। বাড়তি টাকা কে তুলতে বলল তা আমরা জানি না। তবে ‘উত্তোলিত টাকা মালিকদের সন্তানদের মেধাবৃত্তি ও সদস্যদের মৃত্যুতে এককালীন অনুদান দিতে ব্যয় হয়’ বলে দাবি করেছেন রাজশাহী সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো।

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে টাকা ওঠে তার মধ্যে প্রতিটি বাস থেকে ৩০ টাকা পায় শ্রমিক ইউনিয়ন। বাকি টাকা মালিক সমিতি নেয়। মালিক সমিতি কত টাকা তুলছে তা আমরা জানি না। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামিম হোসেন বলেন, রেজুলেশনের বাইরে কেউ অতিরিক্ত টাকা তুললে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারে।

অপরদিকে, পরিবহনশ্রমিকরা জানান, রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১১৩ টাকা। বাসে নেওয়া হয় ১১০ টাকা। ভাড়ার টাকা অতিরিক্ত না নেওয়া হলেও বেশি টাকা দিতে হচ্ছে মালিক সমিতিকে। ফলে বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারদের লাভ কম থাকছে। এতে কেউ কেউ যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।