অবৈধদের বিতারনে ট্রাম্পের পরিকল্পনা
হাসান মাহমুদ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:১৯ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার
জরুরী অবস্থা ঘোষণা ও সেনাবাহিনীর অভিযান
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে যাবার সকল প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। তাঁদের দু’জনের মধ্যে হোয়াইট হাউজে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্প সরকারের শুরু থেকেই অভিবাসন কর্মসূচি নিয়ে সবচেয়ে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হবার গুঞ্জন চলছে। অভিবাসন এবং বিদেশ নীতি নিয়ে ‘হার্ডলাইনে’ থাকবে ট্রাম্পের নতুন সরকার। যুক্তরাষ্ট্রে আসা বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের যে সকল নাগরিক ‘বৈধ’ কাগজপত্র পাননি তারা রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন। ‘অবৈধদের ডিপোর্ট’ করার জন্য ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সারা দেশে জরুরী অবস্থা জারি করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এসময় ন্যাশনাল গার্ড বা সেনাবাহিনীকে অভিবাসন কাজে সহযোগিতার জন্য নামানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। অভিবাসন নীতি নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চীফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার এবং আইস-এর সাবেক পরিচালক টম হোম্যান অভিবাসিদের ব্যাপারে ‘হার্ড লাইনার’ হিসেবে পরিচিত। ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রথমদিন থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের ডিপোর্ট করার অভিযান শুরু করার নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সরকারের শীর্ষ পদগুলোতে ইতোমধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করে এনেছেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাট গায়েটস’র যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হবার ফলে নতুন কাউকে বেছে নিতে হবে ট্রাম্পকে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যক্তি ম্যাট গায়েটস তাঁর নমিনেশন পেপার প্রত্যাহার করায় তিনি ‘টক অব দ্য পলিটিক্স’ এখন।
সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্পের ২০২৫ সালের পরিকল্পনার একটি মূল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি। সীমান্ত প্রাচীরের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাবার পরিকল্পনা, উন্নত নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার, কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রোটেকশনের জন্য কর্মী বৃদ্ধি করা হবে। নতুন অভিবাসন নীতিগুলি বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের নির্বাসন ত্বরান্বিত করতে পারে, যাদের অপরাধমূলক রেকর্ড রয়েছে তাদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার পরিকল্পনার কথা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
আগামী সরকারের প্রশাসন একটি কঠোর নির্বাসন কৌশল বাস্তবায়ন করবে বলে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। যেখানে (আইসিই) ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট মানুষের কর্মক্ষেত্রে অভিযান চালানো এবং পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর পরিকল্পনা কথাও জানানো হয়েছে। এর ফলে ‘অনিবন্ধিত’ ব্যক্তিদের সনাক্তকরণ এবং তাদের আটক করার জন্য আইসিই-এর সাথে সহযোগিতার বিষয়গুলো উঠে আসছে।
কঠোর অভিবাসন ব্যবস্থার পক্ষের ব্যক্তিরা আমেরিকান নাগরিকদের জন্য চাকরি পুনরুদ্ধার এবং সরকারী সম্পদের উপর চাপ হ্রাস করার উপায় হিসাবে এর প্রশংসা করছেন। তবে, অভিবাসন প্রবক্তারা যুক্তি দিচ্ছেন যে, এই নীতির ফলে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত প্রোফাইলিং, পারিবারিক বিচ্ছেদ এবং অযৌক্তিক ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ করার পাশাপাশি, ট্রাম্প প্রশাসন বৈধ অভিবাসন পথকে অগ্রাধিকার দিতে পারে। ‘এইচ ওয়ান বি-ভিসা’ প্রোগ্রাম, যা দক্ষ বিদেশী কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার অনুমতির পথ সহজ করা হতে পারে। ‘চেইন মাইগ্রেশন’ ভিসা কাটছাঁট হতে পারে। তবে ‘পাবলিক চার্জ’ রুলের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কথাও বলা হচ্ছে। পাবলিক চার্জে পড়লে গ্রীণ কার্ড প্রাপ্তি সহজ হবে না।
মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ‘ডিপোর্ট অভিযান’ চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। ধারণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ অবৈধভাবে বসবাস করছেন। গণঅভিযানে আটক ব্যক্তিদের কীভাবে চিহ্নিত করা হবে এবং কোথায় তাদের আটক করা হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।