পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের নিয়োগবিধি
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৯:৩৩ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ রোববার
মেট্রোরেল কোম্পানিতে পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে ফেলা হয়েছিল নিয়োগবিধি। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগবিধি পরিবর্তন করার অভিযোগ। নিজে এমডি থাকার বৈধতা পাওয়ার জন্য সুবিধামতো নিয়ম পরিবর্তন করেন তিনি। এজন্য কোম্পানির মেমোরান্ডাম এবং আর্টিকেলস অফ এসোসিয়েশন (এওএ)-এর সংশোধন করেন তিনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার আবার আগের নিয়োগের নিয়মে ফিরে গেছে। আর সেই অনুযায়ী এমডি পদে দেয়া হয়েছে নতুন বিজ্ঞপ্তি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডিএমটিসিএলের প্রতিষ্ঠাকালে জাপানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এমডি পদের জন্য যোগ্যতা হিসেবে সিভিল বা মেকানিক্যাল প্রকৌশলীতে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ ছিল। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব পদ থেকে ছিদ্দিক অবসর নেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৬শে অক্টোবর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ছিদ্দিককে এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুমোদিত একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে উচ্চ বেতনের এই পদে নিয়োগ পান তিনি। তবে এমডি পদে তার কোনো মেয়াদ উল্লেখ করা ছিল না। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ছিদ্দিক কোম্পানির মেমোরান্ডাম এবং আর্টিকেলস অফ এসোসিয়েশন (এওএ)-এর সংশোধন করেন। এওএ-র ধারা ৩৩ (২)-এ পরিবর্তন এনে তিনি এমডি পদের যোগ্যতা হিসেবে ‘সড়ক পরিবহন খাতে অভিজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত সচিব’ উল্লেখ করেন। ফলে তার নিয়োগের বিষয়টিকে বৈধতা দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি এমডি পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ছিদ্দিকের বিধি অনুযায়ী সেই আমলাকেন্দ্রিক নির্ভররতা রাখা হয়নি। গত ৯ই অক্টোবর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এমডি পদের জন্য সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এমডি পদের জন্য প্রার্থীদের সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা প্রশাসন বা পরিবহন ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বড় মাপের গণপরিবহন প্রকল্পে অন্তত ২০ বছরের অভিজ্ঞতা, যার মধ্যে তিন বছর শীর্ষ নেতৃত্বে থাকতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের জটিল প্রকল্প বাস্তবায়নে অভিজ্ঞতা প্রার্থীদের জন্য আবশ্যক।
বর্তমান নিয়োগের জন্য গত ১০ই নভেম্বর একটি সুপারিশ কমিটি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম বদরুজ্জামান। সদস্য হিসেবে আছেন অধ্যাপক মো. শামসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাকিলা হুদা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার ও ডিএমটিসিএল-এর কোম্পানি সচিব খোন্দকার এহতেশামুল কবীর। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই বর্তমান বিজ্ঞপ্তিতে এমডি নিয়োগ হবে।
তবে নতুন এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে মেট্রোরেলের কিছু কর্মকর্তার। তারা বলছেন, কোম্পানি পরিচালনা করার জন্য প্রকৌশলী হওয়ার বিধান দেয়ায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্য করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমটিসিএল-এর এক কর্মকর্তা বলেন, এমডি পদ সম্পূর্ণভাবে ম্যানেজারিয়াল ও এডমিনিস্ট্রিটিভ পদ হওয়া সত্ত্বেও বৈষম্য করে শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ার গ্র্যাজুয়েট এবং নন রেডিডেন্ট বাংলাদেশিদের আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে করে মেট্রোরেলের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের আবেদন করা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
নিয়োগ কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. শামসুল হক বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্প ইঞ্জিনিয়াররা পরিচালনা করে। জাপান লিখে দিয়েছিল এখানে ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ার থাকতে হবে। কিন্তু এটা কেটে দিয়েছেন তিনি (ছিদ্দিক)। আগের এমডি যে দুর্নীতি করেছে তার বিচার হওয়া দরকার। আগের সরকারকে ডুবানোর পেছনে কয়েকটা সচিবের মধ্যে এই ছিদ্দিক একজন। এখন অন্য সচিবরাও স্বপ্ন দেখে মেট্রোরেলের এমডি হওয়ার। তিনি বলেন, নতুন সরকার আবার আগের নিয়োগের নিয়মে ফিরে গেছে। আর সেই অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, তারা আগে যে নিয়ম ছিল সেটিকে বাতিল করে দিয়েছেন। এখন এই বিষয়ে (মেট্রোরেল) অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হবে। উৎস: মানবজমিন