বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার ইসকন নেতা চিন্ময়
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:২৮ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুন্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা ছাড়াও শিশুদের সঙ্গে চিন্ময়ের যৌন নির্যাতনের বিষয়টি অবহিত হয়ে ইসকনের প্রধান কার্যালয় তার সঙ্গে ১৮ বছরের নিচের মানুষের সঙ্গে মিশতে না দেওয়াসহ পাঁচটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, পুলিশের একটি অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ডিবি গ্রেপ্তার করেছে। যারা আবেদন করেছে, তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হবে।
চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, লক্ষ্মীপুর, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে।
সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার বলেন, আজ (গতকাল) বিকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে যায় ডিবি। তার ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এই মঞ্চেরও মুখপাত্র। ওই সমাবেশের পর পরই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত)। সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। কয়েক দিন এই জোট আট দফা দাবিতে রংপুরে সমাবেশ করেছে। অন্যদিকে সম্প্রতি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহিষ্কার করেছে ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) বাংলাদেশ। এর আগে গত ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর, ‘ইসকন’ আন্তর্জাতিক শিশু সুরক্ষা অফিসের পরিচালক কমলেশ কৃষ্ণ দাস স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে মন্দির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বলেছিলেন, ইসকন আন্তর্জাতিক শিশু সুরক্ষা অফিস আইনানুগ নাম চন্দন ধর, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জন্য অবিলম্বে অন্তর্র্বর্তী বিধিনিষেধ আরোপ করছে। তার বর্তমান পোস্ট। মন্দির সভাপতি, পুণ্ড্রিক ধাম, হাটহাজারি, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
যা ছিল নিষেধাজ্ঞায় : ১. যে কোনো ব্যবস্থাপনা বা নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত না করা, ২. ক্লাস বা লিড কীর্তন না দেওয়া, ৩. শ্রীলা প্রভুপাদ পূজা বা মালা পরানোসহ কোনো জনসাধারণের উপাসনায় রাখা যাবে না, ৪. ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া যাবে না, ৫. সিপিটির পরিচালক কিংবা ইসকন কোর কমিটির অনুমতি ছাড়া ইসকন কিংবা মন্দির ব্যবস্থাপনার কোনো স্থাপনা কিংবা উপাসনালয়ে তাকে রাত্রিযাপন করতে দেওয়া যাবে না। এই চিঠির ১০ দিনের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর বিষয়টিও দ্রুত সময়ের মধ্যে অবহিত করতে ও নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে। সূত্র বলছে, শিশুদের সঙ্গে চিন্ময়ের যৌন হেনস্তার বিষয়টি ইসকনের প্রধান কার্যালয় অবহিত হওয়ার পরই এমন সিদ্ধান্ত আসে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নিন্দা : চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, এ গ্রেপ্তারের ফলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা অনতিবিলম্বে চিন্ময় কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারীকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান। আমাদের যশোর প্রতিনিধি জানান, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে যশোরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল রাত ৮টায় যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে অংশ নেন শতাধিক শিক্ষার্থী।
নির্দিষ্ট কোনো সংগঠনের ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন হয়নি। তবে মানববন্ধন থেকে ‘তুমি কে আমি কে, সনাতনী সনাতনী’, ‘চিন্ময় প্রভু আটক কেন, জবাব চাই’ স্লোগান দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে ইসকনের সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী। ভক্তরা তাকে ডাকেন ‘চিন্ময় প্রভু’ নামে। কিন্তু সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের কারণে তিনিসহ আরও কয়েকজনকে গত জুলাই মাসে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
চট্টগ্রামের হাজারি গলির ঘটনা প্রসঙ্গে গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে ‘ইসকন বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী এ কথা জানান।
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে চট্টগ্রামের পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌরদাস ও সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাসকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
বহিষ্কৃতদের মাধ্যমে সংঘটিত কোনো কার্যক্রম ইসকন জড়িত নয় বলে উল্লেখ করে সেদিন তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা সহিংসতার মতো বেআইনি কাজের সঙ্গে ইসকনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।