শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারতের লোকসভায় বাংলাদেশ ইস্যুতে তোলপাড়

আজকাল ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:২৮ এএম, ৩০ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার



জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারত অভিযোগ করে আসছে বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। হিন্দুদের শত শত মন্দির, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো অতিরঞ্জিত খবরও প্রকাশ করেছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম।
 
এসবের জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে সরেজমিন প্রতিবেদন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের অতিরঞ্জিত ও কথিত অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করা বন্ধ হয়নি। এর মধ্যেই বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক তৎপর হয়ে উঠেছে দেশটি।

২৮ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ভারতের সংসদ লোকসভায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর কথিত হামলার অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, লোকসভায় (সংসদে) কয়েকজন সংসদ সদস্য বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তারা জানতে চান, বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির ও প্রতীমা ভাঙচুরের ঘটনা বেড়েছে কি না। ভারত সরকার এই বিষয়টি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উত্থাপন করেছে কি না।
 
এসব প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং সংসদে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে হিন্দু মন্দির ও প্রতীমা ভাঙচুরের ঘটনার তথ্য শোনা গেছে। ভারত সরকার এ ব্যাপারে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে তাঁতিবাজারে পূজাম-পে হামলা, সাতক্ষীরার কালী মন্দির থেকে দুর্গাপূজার সময় সোনার মুকুট চুরির ঘটনা।’’
 
তিনি বলেন, ‘‘ভারত সরকার হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর প্রার্থনাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া সংখ্যালঘুসহ দেশটির সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বলে জানিয়ে দিয়েছে ভারত।”

এদিকে, সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার এবং পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তারা দু’জন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিক নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার কথিত অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
 
অন্যদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, অন্য দেশের বিষয় হওয়ায় এটি নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় দেওয়া বক্তৃতায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

বক্তৃতায় মমতা বন্দোপাধ্যায় বাংলাদেশের বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘‘এই সমস্যাটি কেন্দ্রীয় সরকারের সমাধানের বিষয় এবং তার রাজ্য সরকার কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে চলবে।’’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশ একটি ভিন্ন দেশ। ভারত সরকার এটি দেখবে। এটি আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। আমাদের এটি নিয়ে কথা বলা বা হস্তক্ষেপ করার কথা নয়। আমরা ভেতরে ভেতরে দুঃখ পেলেও কেন্দ্রের নির্ধারিত নীতি অনুসরণ করি।’’

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের ইসকনের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছেন বলেও জানিয়েছেন। তবে ইসকনের নেতাদের সঙ্গে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি। সূত্র: এনডিটিভি, পিটিআই।