শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জিয়াকে ‘ডাকাত’ বলায় বিচারপতিকে ডিম ছুড়লেন আইনজীবীরা

স্টাফ রিপোর্টার

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৫৫ এএম, ৩০ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার


 

বিএনপির সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি মামলার রায়ে তাঁকে ‘ডাকাত’ বলে অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আশরাফুল কামাল আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েছেন। আইনজীবীরা বুধবার তার ওপর ডিম ছুড়ে মারেন। পরে তিনি এজলাস থেকে নেমে যেতে বাধ্য হন।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল তাঁর পর্যবেক্ষণের একাংশে ২০১৬ সালে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে বলেন,  মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ‘বাকবাকুম’ করে ক্ষমতা নিয়ে নিলেন, তথা রাষ্ট্রপতির পদ দখল করলেন। একবারও ভাবলেন না, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী। সরকারি কর্মচারী হয়ে কীভাবে তিনি রুলস ভঙ্গ করেন। ভাবলেন না তার শপথের কথা। ভাবলেন না, তিনি দেশকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে মৃত্যুকে বরণ করার শপথ নিয়েছিলেন। ভাবলেন না, তিনি এবং তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করতে।  
বিচারপতি বলেন, আমরা জানি ডাকাতরা সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতি করে। ডাকাতদের যে নেতৃত্ব দেয় তাকে ডাকাত সর্দার বলে। ডাকাতি করার সময়ে ডাকাতরা বাড়িটি বা ঘরটি কিছু সময়ের জন্য অস্ত্রের মুখে দখল করে এবং মূল্যবান দ্রব্যাদি লুণ্ঠন করে। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গংরা দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও অস্ত্র এবং অবৈধ কলমের খোঁচায় নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে ভেঙে ডাকাতদের মতো অবৈধভাবে জোরপূর্বক জনগণের ক্ষমতা ডাকাতি করে দখল করেন। যে বিচার বিভাগ এবং এর বিচারকদের ওপর আইনগত দায়িত্ব ছিল সংবিধানের সামান্যতম বিচ্যুতিকে রক্ষা করা, সংরক্ষণ করা এবং নিরাপত্তা প্রদান করা; সেই বিচার বিভাগ এবং এর তৎকালীন বিচারকরা সংবিধানকে এককথায় হত্যা করলেন, জনগণের রায় ডাকাতি করে ‘জনগণের নির্বাচিত সংসদকে বাতিল করলেন। অপরদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও আর্মি রুলস ভঙ্গ করে জনগণের রায়ে নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে হত্যা করে দেশের সংবিধানকে হত্যা করে অস্ত্রের মুখে অন্যায়ভাবে, অসৎভাবে হত্যাকারীদের দোসর হয়ে জনগণকে চরম অবজ্ঞা করে ক্ষমতা দখল করেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী তথা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং জামায়াতে ইসলামীকে এদেশে পুনর্বাসন করেন। তাদের রাজনীতি করার অধিকার দেন। তাদের নাগরিকত্ব দেন। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সংসদ সদস্য করেন এবং তাদের মন্ত্রী বানিয়ে, তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের সঙ্গে বেঈমানি করেন। এরপরেও কি বাংলাদেশের জনগণ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা বলতে পারে?
বিচারপতি আরও বলেন,  মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান শুধু জাতির পিতা ও তার পরিবারের এবং জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের শুধু দোসরই হননি, বরং তিনি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছেন রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য ইত্যাদি বানিয়ে। তিনি আরও জঘন্য যে কাজটি করেন তা হলো, তিনি জনগণের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের হত্যার বিচার বন্ধ করে দায়মুক্তি আইন প্রণয়ন করেন। অর্থাৎ তিনি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকে এই দায়মুক্তি আইন দ্বারা সমর্থন দিয়ে প্রমাণ করেন তিনিও জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারী এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদেরই একজন।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের অভিযোগ, কয়েক দিন আগে একটি মামলার রায় দেন এই আদালত। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে জিয়াউর রহমান প্রাসঙ্গিক না হলেও এই বিচারপতি জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে ‘অশালীন’ মন্তব্য করেন। এ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল কয়েকদিন ধরেই। আইনজীবীরা জানান, এই বিচারপতি এজলাসে উঠলে কয়েকজন আইনজীবী সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন- আপনি এই চেয়ারে বসে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন। আপনার এই চেয়ারে বসার অধিকার নেই। একপর্যায়ে আইনজীবীরা বিচারপতির দিকে ডিম ছুড়ে মারেন।