ভারতীয় স্ক্রিপ্ট রূপায়িত করার কাজে নেমেছে কিছু মানুষ: আসিফ নজরুল
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৪৯ এএম, ১ ডিসেম্বর ২০২৪ রোববার
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেন শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) তার ইউটিউব চ্যানেলে ‘পুলিশ, আনসারের সমম্বয়ে গঠিত বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র গেরিলা আক্রমণের পরিকল্পনা’ শিরোনামে একটি ভিডিও আপলোড করেন। যেখানে দাবি করা হয়, গত ৩-৪ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টে ভারতের দালালদের সঙ্গে মিটিং করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
তবে ইলিয়াস হোসেনের ভিডিওর এসব তথ্যকে আজগুবি, ভিত্তিহীন, অকল্পনীয় বলে আখ্যায়িত করেছেন আসিফ নজরুল। মূলত ব্যক্তিগত চরিত্র হননের অসৎ উদ্দেশ্যেই এমনটি করা হয়েছে বলে দাবি তার। আইন উপদেষ্টার মতে, কিছু মানুষ উদ্দেশ্যমূলক সমালোচনার নামে অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্তিহীন করা ও দেশকে অস্থিতিশীল করে ভারতীয় স্ক্রিপ্ট রূপায়িত করার কাজে নেমেছে।
আপনি কার পারপাস সার্ভ করছেন?’ এমন প্রশ্ন রেখে ইলিয়াস হোসেনকে উদ্দেশ্য করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আজগুবির তো একটা সীমা থাকা দরকার। আপনি তো সত্যের কাছাকাছি থাকলেও মানুষ প্রতিবাদ করবে। এটা ব্যক্তিগতভাবে বললাম শুধু আমার ক্ষেত্রেই। কার ক্ষেত্রে হচ্ছে না?’
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আসিফ নজরুল। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) উদ্যোগে ‘স্মৃতির মিনার: গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকবে। আমরা একজন আরেকজনের কাজের সমালোচনা করব। কিন্তু মিথ্যা কথা কেন বলব? মানুষজন আমাকে বলে আপনি ক্লিয়ার করেন। আমি বলি, আমি কি ক্লিয়ার করব? সত্যের কাছাকাছি থাকলে মানুষ প্রতিবাদ করে।
তার মতে, পরাজিত শক্তির হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এই দেশকে ঘিরে আমাদের এক প্রতিবেশী দেশের স্ক্রিপ্ট আছে না—শেখ হাসিনা চলে গেলে আর কেউ দেশ চালাতে পারবে না অথবা দেশ উগ্রবাদীদের খপ্পরে পড়বে, তার (হাসিনা) কোনো বিকল্প নেই—এই ভারতীয় স্ক্রিপ্ট এখানে রূপায়িত করার কাজে নেমেছে কিছু মানুষ।’
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘একটা ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, ৩-৪ তারিখ (আগস্ট) রাতে আমি নাকি আর্মি অফিসারদের নিয়ে এবং ভারতের দালালদের নিয়ে মিটিং করেছি। আমি অবাক হয়ে যাই, মানুষের কল্পনারও একটা সীমা থাকা উচিত। মিথ্যা কথা কেন বলব?’
ওইদিন রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ৩ আগস্ট রাতে মাহবুব মোর্শেদসহ (বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক) অন্যদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের ১৯ নম্বর বিল্ডিংয়ে ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোস্তফা মামুনের বাসায় থেকেছি। আশঙ্কা ছিল, আমাকে মেরে ফেলবে, না হলে গ্রেপ্তার করবে। আর ৪ আগস্ট সন্ধ্যার পর অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের একটি প্রোগ্রামে আমি অংশ নিয়েছি। যার অডিও আপনারা অনেকেই শুনেছেন। যেখানে আমি বলেছিলাম— আমাদেরকে মেরে ফেলতে পারে। কারণ, সবাই আমাদেরকে বলছে পালিয়ে যেতে। তারপর সেদিন রাতেও ঢাবি শিক্ষক মোস্তফা মামুনের বাসায় ছিলাম।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আজ আমাদের রাষ্ট্র গঠনের দায়িত্ব। এত মানুষের স্যাক্রিফাইজের বিনিময়ে আমাদের প্রধান কাজ কী? আমি সব সময় বলি, আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে চারটা- গণহত্যার বিচার, আহত-নিহতের পরিবারের পুনর্বাসন, সংস্কার ও নির্বাচন। ১৭ বছর বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয় না। বাংলাদেশের তরুণরা ভোট দেয় না।
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট ফেরদৌস আরা রুমী, বাসস পরিচালনা বোর্ডের সদস্য আনোয়ার আলদীন ও নূরে আলম মাসুদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান।