রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৬ ১৪৩২   ২১ শাওয়াল ১৪৪৬

মোদির কাছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ধর্ণা

মনোয়ারুল ইসলাম

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৫৩ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ শনিবার



বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের অবনতিতে ধাক্কা লেগেছে ভারতীয় ব্যবসা বানিজ্যে। ২০ বিলিয়ন ডলারের বাজার তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সাবেক ও পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়াকে কেন্দ্র করেই দু দেশের সম্পর্কের অবনতি। রফতানী ও মেডিক্যাল ব্যবসায় বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারত। পশ্চিম বঙ্গের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। এ অবস্থা বেশিদিন চলতে দিতে রাজি নন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তাদের প্রশ্ন হাসিনার দায় নিয়ে আমরা কেন বাজার হারাবো। তারা ঢাকা-দিল্লী সংকটে অস্থির হয়ে উঠছেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তাদের হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তাদের আশংকা দু’দেশের এই সংকট দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশের আমদানী রুট পরিবর্তন হতে বাধ্য। তারা চীন ও পাকিস্তান সহ পার্শ্ববতী দেশগুলোর সাথে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়বে। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির সন্মুখীন হবে ভারত। মনে রাখতে হবে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই সবচেয়ে বড় ভারতীয় বাজার। ইেিতামধ্যেই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের উদ্বেগের কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানিয়েছেন। তারই ফলশ্রুতিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

জাতিসংঘের দেয়া তথ্যানুসারে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ দ্রব্য সামগ্রী আমদানী করেছে ১১.২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ দ্রব্য সামগ্রী ভারতে রফতানী করেছে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। ২ দেশের বানিজ্য ঘাটতির পরিমান ৯.২৫ বিলিয়ন ডলার। অসম ও এক তরফা বানিজ্য ঘাটতি পূরণে কোন উদ্যোগই ছিল না হাসিনা সরকারের। বরং আহলাদিত হয়ে হাসিনা বলতেন, ভারতকে যা দিয়েছি, তা তাদের সারাজীবন মনে রাখতে হবে। ফ্রি পোর্ট ও ট্রানজিট সুবিধা ভারতকে দেয়া হয়েছিল ফ্রি লাঞ্চ হিসেবে। এ ধরনের সুবিধা প্রদান বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। মালয়েশিয়া থেকে আলাদা হবার পর সিঙ্গাপুর তাদের পোর্টকে কাজি লাগিয়ে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বি হয়েছে। আজ তারা অন্যতম একটি ধনী দেশ।। কিন্তু বাংলাদেশ শর্তহীনভাবে চট্রগ্রাম ও মঙ্গলা পোর্ট ভারতের কাছে তুলে দিয়েছে।

মেডিক্যাল টুরিষ্ট হিসেবে ভারতে ২০০৯ সালে মোট বিদেশীর ২৩.৬ ভাগ ছিল বাংলাদেশি। ২০১৯ সালে তা দাঁড়ায় শতকরা ৫৭.৫ ভাগে। অর্থাৎ ভারতে চিকিৎসার জন্য অধের্কেরও বেশি গমন করে বাংলাদেশ থেকে। প্রতিবছর মেডিক্যাল ও ভ্রমনের জন্য বাংলাদেশ থেকে গড়ে ২০ লাখ ভারতে গমন করে।

ভারত ২০২৩ সালে পর্যটন খাতে আয় করেছিল প্রায় ২৪ হাজার কোটি রুপি। এরমধ্যে বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছ থেকেই আয় করে ৬ হাজার কোটি রুপি। বাংলাদেশি পর্যটকদের বড় অংশটি গমন করে চিকিৎসার জন্য। ১১ লাখ রোগী ভারতে গমন করেছিল ২০২৩ সালে। এরপর কেনাকাটা ও ভ্রমণ।

 
‘কলকতায় মিনি বাংলদেশ এলাকায় পর্যটক শূন্য একটি রেষ্টুরেন্ট’

 

ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটরস, পশ্চিমবঙ্গ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান দেবজিৎ দত্ত বলেছেন, আগষ্ট থেকে বাংলাদেশ ও ভারতীয়দের মধ্যে যাতায়াত কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ভিসা ইস্যুও বন্ধ।পশ্চিম বঙ্গের  ট্রাভেল অপারেটরস,হোটেল. গেষ্ট হাউজ ও হসপিটালসগুলোর ব্যবসা শতকরা ৯০ ভাগ নীচে নেমে এসেছে। একের পর এক কলকাতার হোটেল ও রেষ্টুরেন্টগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে হাসাপাতালে প্রতিদিন ২০০ বাংলাদেশি রোগী দেখতো, এখন তারা ২টি রোগীও পাচ্ছে না। দু’দেশের মধ্যে সম্পকর্কের উন্নয়ন না হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে পশ্চিম বাংলা।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতায় আসা বাংলাদেশি পর্যটকদের তীব্র হ্রাস শহরের আতিথেয়তা এবং খুচরা খাতে, বিশেষ করে নিউ মার্কেট এলাকায়।  এটি 'মিনি বাংলাদেশ' নামে পরিচিত। হোটেল মালিকদের রুম শুল্ক ৫০% পর্যন্ত কমাতে বাধ্য করা হয়েছে এবং তাদের ক্ষতি কমানোর জন্য অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য তাদের ফোকাস দেয়া হয়েছে। নিউমার্কেটের দোকানগুলি বাংলাদেশী গ্রাহকদের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। তারা প্রতিবেশী দেশের অশান্তির কারণে ক্রমবর্ধমান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। "আমাদের হোটেলে বর্তমানে কোনো বাংলাদেশী পর্যটক নেই, যা অস্বাভাবিক। " বলেন ডি কে-এর মালিক পিন্টু বসাক। "বছরের এই সময়, আমাদের কক্ষগুলি সাধারণত বাংলাদেশী পর্যটকদের দ্বারা সম্পূর্ণ বুক থাকে। কিন্তু এখন আমরা আমাদের ক্ষতি কমাতে ভারতের অন্যান্য স্থান থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য ছাড় দিচ্ছি," বলেছেন আল হিন্দের মালিক। শিলিগুড়ি থেকে প্রকাশিত ‘সূত্র ২৪’ লিখেছে, বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে শিলিগুড়িতে অর্থনৈতিক সংকট চরমে।
পাদটীকা: ‘ভারতকে যা দিয়েছি, তা সারাজীবন মনে রাখবে’ শেখ হাসিনার এই বক্তব্যে বাংলাদেশের মানুষ সেদিন অবাক হয়েছিল। ফ্রি ট্রানজিট ও ফ্রি পোর্ট ছিল শর্তহীন উপহার। সময় এসেছে ‘ফ্রি এই লাঞ্চ’ বন্ধ করে দেয়া। আর্ন্তজাতিক রীতিনীতি মেনে শুল্ক বসিয়ে বাংলাদেশ প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে ট্রানজিট ও পোর্ট থেকে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশের রোগীদের দেশেই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যুগান্তকারি পদক্ষেপ নিতে পারে।