রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১   ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ড. ইউনূসের কি হবে

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫৮ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ শনিবার

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুর্নবহাল

 

প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান থাকতে পারবেন ? পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুর্নবহাল করার পর এই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। বাংলাদেশ সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি নির্বাচনকালীন সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো ৯০ দিন মেয়াদি সরকার। সেই হিসাবে বর্তমান অর্ন্তবর্তি সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলা যায় কিনা সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এদিকে, আগামী ২০ শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্্েরসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগদানের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। হোয়াইট হাউস এরিমধ্যে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদেরকে শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো শুরু হয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূস এখনও আমন্ত্রণ পেয়েছেন কিনা সেটা কেউ নিশ্চিত করছেন না। তাছাড়া, ওই সময়ে সুইজারল্যান্ডের দাভোস নগরে ‘ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরাম’-এর বৈঠকে যোগ দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে ট্রাম্পের শপথে যোগ দিতে পারলে সেখানে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে ্একটা যোগাযোগ সৃষ্টির উপলক্ষ পাওয়া যেতো।  
গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে বর্তমান অর্ন্তবর্তি সরকার গঠিত হয়েছে। রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে এই সরকার পরিচালিত হচ্ছে। জানুয়ারিতে আরেকটি সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করে কবে নির্বাচন হবে তার রোডম্যাপ তৈরী হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সামান্য সংস্কার করেই নির্বাচন দিতে হলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। তবে তার বদলে প্রত্যাশিত সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হলে তা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি হতে পারে। নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হবে জানুয়ারিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর। কিন্তু প্রশ্ন হলো. নির্বাচনের জন্যে কি আলাদা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হবে নাকি এই সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসাবে থাকবে –-- এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জানুয়ারিতে রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার সংলাপে এই প্রশ্নের জবাব মিলবে বলে আশা করা যায়। আদালতও সম্ভবত এই বিষয়ে একটি দিক নির্দেশনা নিয়ে হাজির হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুর্নবহালের প্রশ্নে আদালত কয়েকটি যুক্তিকে বড় করে দেখিয়েছে। হাইকোর্ট মনে করেছে, বাংলাদেশের সংবিধানের চরিত্র হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্ত করায় ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর ছিলো না। এটা বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক চরিত্রকে বিনষ্ট করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরে এসে নির্বাচন দেবার নীতিকে সমর্থন করেছে।
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আরও নতুন নতুন প্রশ্নের উদ্রেগ হচ্ছে। এমন একটি প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি কি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে ? এই প্রশ্নে নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কোনও মন্তব্য না করে বলেছেন, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তাহলে রাজনীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান নিয়ামক হিসাবে থাকছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই হয়তো আগামীর নির্বাচনী মেরুকরনও নির্ধারন করবে। তবে ট্রাইব্যুনালে যেহেতু শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিচার হচ্ছে বিধায় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নে নৈতিক বাধার মুখেও পড়তে পারেন।
এদিকে, গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। আগামীতে জাতীয় সরকার গঠিত হলে ছাত্ররা সেই সরকারেও থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। সময়ের সাপেক্ষে অনেক অস্পষ্টতাও কেটে যাবে এমনটাই প্রত্যাশিত।