এমন দৃশ্য আর কাম্য নয়!
মনোয়ারুল ইসলাম
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:০৩ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ শনিবার
বাংলাদেশ সোসাইটির অভিষেক অনুষ্ঠান। উৎসবের আমেজ। তাও বাংলাদেশের বিজয় দিবসে। উডসাইডের তিব্বতিয়ান কমিউনিটি সেন্টারে উপচেপড়া ভীর। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাদার সংগঠনের নবনির্বাচিত কর্মকতাদের বরণ করে নেবার পালা। কমিউনিটির রথি মহারথিরা বক্তৃতা করছেন। এক পর্যায়ে বক্তৃতা করতে মাইকে আসেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারন সম্পাদক ফকরুল আলম। বিজয়ের মাসকে স্মরণ করছিলেন। তিনি ৪টি আন্দোলন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। ৪৭, ৭১, ৯০ (এরশাদ বিরোধী আন্দোলন) ও ২৪ এর ছাত্রজনতার আন্দোলনের কথা । তিনি এক পর্যায়ে বলেন, আমরা ৪ বার বিজয় অর্জন করেছি। সবশেষ ২৪ এর ৫ আগষ্ট। আমাদের প্রিয় জিনিষ গণতন্ত্রকে, কথা বলার অধিকারকে ও বেঁেচে থাকার অধিকারকে সম্পূর্নরুপে ধ্বংস করে সেবাদাসে পরিণত করেছিল কোন একটি গোষ্ঠী। সেখান থেকে আমরা জয়লাভ করেছি। সেই বিজয়েরই একটি দিন। আসুন সেই বিজয়টাকে চেরিস করি। অতীতে যারা আমাদের ঠকিয়েছে, অতীতে যারা আমাদের লুন্ঠন করেছে, অতীতে আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, আমাদের জেলে রেখেছে।আমাদের গুম করেছে। হত্যা করেছে। আমাদের নারীর ওপর নির্যাতন করেছে। আমাদের যা ছিল তা ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আজকের দিনে শপথ নিতে হবে। আসুন শপথ নেই। তাদের সেই চেহারাকে আমরা তুলে ধরবো। (ফখরুল কোন দলের নাম উল্লেখ করেন নি।) তার এই বক্তব্যের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা উত্তেজিত হয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসেন। আওয়ামী লীগ নেতা মুজাহেদুল ইসলাম, আবুল হাসিব মামুন,ফরিদ আলম, শেখ আতিক ও প্রদীপ রঞ্জন কর মারমুখি হয়ে স্টেজের সামনে চলে আসেন। জ্বনাব ফখরুলকে রাজাকার রাজাকার বলে গালিগালাজ করতে থাকেন। তাদের সাথে যোগ দেন আরও ২০-২৫ জন। পুরো অনুষ্ঠানে বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়। সোসাইটির নেতারা হাতজোড় করে তাদের শান্ত হতে বলেন। টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে আবুল হাসিব মামুন চিৎকার করতে থাকেন। নবনির্বাচিত সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম প্রতিবাদী মামুনকে বারবার শান্ত হতে অনুরোধ করেন। উপস্থিত বিএনপি সর্মথকরা প্রথমে চুপ ছিলেন। কিন্তু তারা এক পর্যায়ে আওয়ামী সর্মথকদের দিকে তেড়ে আসেন। এতে শামিল হন জসিম ভূঁইয়া, কাজী আজম সেলিম রেজা, রিপন মিয়া ও মনির হোসেন সহ অনেকে। রিপন মিয়াও টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকেন। মুখোমুখি বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয় আওয়ামী লীগ -বিএনপি। মাইক নিয়ে সোসাইটির সাবেক সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, এটি কোন দলের অনুষ্ঠান নয়। সোসাইটির অনুষ্ঠান। সোসাইটির স্বার্থে ও বাংলাদেশের স্বার্থে আপনারা থামুন। মেয়র আসবেন এই অনুষ্ঠানে। আমাদের মানসন্মান নষ্ট করবেন না। এমনি একটি অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল আধা ঘন্টাব্যাপী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেক মহিলা আতংকিত হয়ে হল ত্যাগ করেন। মেয়রের অগ্রবর্তী টীমের সদস্য হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্তিত ছিলেন প্যাট্রেসিয়া। তিনি এমন দৃশ্য দেখে অবাক হন। চোখেমুখে ছিল আতংকের ছাপ। এক পর্যায়ে প্যানিক অবস্থায় হল থেকে বেরিয়ে যান। পুরো এই অনাকাংখিত ঘটনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। দেশে বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।
অনেকেই বলেছেন, ফকরুল আলমের এমন বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়নি। তিনি কেন সোসাইটির প্লাটফর্মে রাজনৈতিক বক্তব্য দিলেন। প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি বলেছেন, বাক স্বাধীনতার দেশে কারও মুখ বন্ধ করা উচিত নয়। ভিন্নমত প্রকাশের প্রতিবাদ মানে বিশৃংখলা নয়। ম্রাামারি নয়। অন্যের বক্তব্য শোনার মানসিকতা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের আচরন গ্রহন যোগ্য নয়। বিএনপির নেতাদেরও এই বিশৃংখলায় জড়িত হওয়া কাম্য ছিল না। নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির নামে যা চলছে তা লাখো প্রবাসীর প্রত্যাশিত নয়। এতে আমাদের কমিউনিটির ইমেজ ক্ষগিগ্রস্থ হচ্ছে। বিদেশিরা আমাদের এসব দৃশ্য দেখে হাসাহাসি করে। সোসাইটির এ অনুষ্ঠানে বড় অঘটনও ঘটতে পারতো। অসহনশীল ও নোংরা রাজনীতির বিষবাষ্পকে আমরা ধিক্কার জানাই। পরিশীলিত ও পরিমার্জিত রাজনীতিকে স্বাগতম।