ডলার এখন ১২৬ টাকায়
হাসান মাহমুদ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:২০ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ শনিবার
নিউইয়র্কে ডলারের দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। ইউএস ডলার সহজভাবে পাওয়া যায় না। এ কারণে স্থানীয় ডলারের বাজারে আগুন লেগেছে। হু হু করে ডলারের দাম বাড়ছে। ডলারের মূল্য বেড়ে যাবার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ গতকাল বৃহস্পতিবার রেমিট্যান্স ব্যবসায়িদের লাগাম টেনে ধরার জন্য একটি নোটিশ জারি করেছেন। ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম ১২০ টাকার ভেতরে সিমাবদ্ধ রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বাস্তবে তা সম্ভব হবে কি-না না নিয়েই গুঞ্জন চলছে। নিয়ন্ত্রণহীন ডলারের বাজার নিজেদের হাতে রাখতেই এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ভলিয়ম বেশি দেখাবার জন্য ইউএস ডলার নিজেই এখন সংগ্রহ করছে। চলতি ডিসেম্বর মাসজুড়ে এই কার্যক্রম চলবে বলে জানা যায়। এছাড়া রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আর কোন ডলার স্থানীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে না। এ কারণেও বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে।
নিউইয়র্কে গতকাল বৃহস্পতিবার ডলারের বাজার হঠাৎ করে ১২৬ টাকার ঘরে চলে যায়। এক ডলার দিলে ১২৬ টাকা পাওয়া যায়। কোন কোন প্রতিষ্ঠান ১২৫.৭৫ টাকা দিচ্ছিল গ্রাহকদের। সেই সঙ্গে ছিল ২.৫% প্রণোদনার টাকা। এ যাবৎকালের মধ্যে ডলারের মূল্য এমন চড়া আর কখনো হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশিরা গতকাল বিভিন্ন রেমিট্যান্স প্রতিষ্ঠানে ভিড় করেন দেশে ডলার পাঠিয়ে কিছু বাড়তি টাকা পাবার আশায়। রেমিট্যান্স ব্যবসায়িরা গতকাল বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদককে বলেন, অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ডলারের দাম আরও বেড়ে ১৩০ টাকা ছাড়িয়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে টাকার মূল্যমান কমছে। গত বুধবার নিউইয়র্কে ডলারের দাম ছিল ১২৪.৯০ পয়সা করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যে, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স দাঁড়িয়েছে ২৪.২৪ বিলিয়ন ডলার, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ এবং বছরের শেষদিকে এটি ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত দুই বছরের তুলনায় প্রবাসি শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়া সত্ত্বেও দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি না কমে বরং বেড়েছে বলে জানা যায়। ২০২৪ সালে, ৯,০৬,৩৫৫ জন বাংলাদেশি গত নভেম্বর পর্যন্ত কাজের জন্য বিদেশে গিয়েছেন। ২০২৩ সালে যা ছিল ১.৩ মিলিয়ন এবং ২০২২ সালে ১.১ মিলিয়ন।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরি রেমিট্যান্স বৃদ্ধি সম্পর্কে বলেন, ‘এটা একটা ভালো লক্ষণ যে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো অপ্রচলিত বাজার থেকে এখন বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসছে।’ রেমিট্যান্স প্রবাহের ফলে বছর শেষের আগেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বাড়বে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আকুর বিল পরিশোধের কারণে রিজার্ভ বেশ নিচে নেমে গেলেও গত দেড় মাসে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বাড়তে বাড়তে আবারও ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সবশেষ আপডেট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম৬) অনুসারে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে এই মুহূর্তে এক হাজার ৯৯৫ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ১৯.৯৬ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভের পরিমাণ দুই হাজার ৪৯৪ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার ডলার।