সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৮ ১৪৩১   ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেষ মুহূর্তে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়ালো যুক্তরাষ্ট্র

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৯:৩২ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ রোববার

অবশেষে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বিল পাশ করে শাটডাউন এড়াতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে পাশ হওয়ার পর ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত সিনেটেও বিলটি পাশ হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্বাক্ষর করলেই এটি চূড়ান্ত হবে।

যদিও এই বিলটিতে সংশোধনী আনতে প্রস্তাব দিয়েছিল মার্কিন সিনেটর র‍্যান্ড পল।

নতুন এই বিলটি পাশ না হলে আজ শনিবার থেকে শাটডাউনের মুখে পড়তো মার্কিন সরকার।
শাটডাউনে পড়লে কিছু জরুরি সেবা বাদে অন্যান্য সেবা খাতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেত। এতে অনেক সরকারিকর্মীর বেতনও পর্যন্ত বন্ধ যাওয়ার শঙ্কা ছিল। বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের ছুটির মুখে লাখ লাখ মার্কিনির দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠতে পারতো ফেডারেল গভর্নমেন্ট শাটডাউন।

এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানের পরও (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ) প্রতিনিধি পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন এড়াতে আনা সংশোধিত বিল পাশে ব্যর্থ হয় রিপাবলিকানরা। এমনকি দলটির কিছু প্রতিনিধিও বিলের বিপক্ষে ভোট দেন।

বিলটি পাশে সংসদের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন ছিল।

বিল কীভাবে আইনে পরিণত হয়?

তৃতীয় দফা চেষ্টার পর হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ শাটডাউন রোধে অর্থ বিলটি পাশ করার পরও শাটডাউন রোধে মার্কিন সিনেটরদের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল।

একজন সেনেটর আপত্তি তুললেও শেষ পর্যন্ত অনুমোদন মিলেছে।
নিয়ম অনুযায়ী বিলকে আইনে পরিণত করতে হলে কংগ্রেসের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সিনেট উভয় জায়গা থেকেই অনুমোদন পেতে হয়। পরে সেটিতে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর করতে হয়।

মেয়াদ শেষে আগামী ২০শে জানুয়ারি জো বাইডেন হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করবেন। বিলটি পাশের পর রাতে হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা এই আইনটিকে সমর্থন করেন।

এতে আরো বলা হয়, `যদিও ডেমোক্রেটদের সিনেটে খুব অল্প সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তবুও এই বিলকে আটকে দেয়া বা ধীরগতির জন্য একজন সিনেটরের আপত্তিই যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের হাতে আছে মাত্র দুই ঘণ্টা। এরপরই তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। শাটডাউনের মুখে পড়বে মার্কিন সরকার।'

সিনেটে রিপাবলিকান সিনেটরের বিরোধিতা

মার্কিন ফেডারেল সরকারের শাটডাউন এড়াতে আনা এই বিলটির বিরোধিতা করেছিলেন রিপাবলিকান সিনেটর র‍্যান্ড পল। তবে এর পেছনে কিছু কারণকে সামনে এনে তিনি তার যুক্তিও তুলে ধরেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পল স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত। তিনি এই বিলের বিরোধিতা প্রস্তাব নিয়ে যান মার্কিন সিনেটে। আপত্তি জানিয়ে বলেন, এই বিলে এমন কিছু ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেটি পাশ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরো বেশি ঋণের ফাঁদে পড়বে।

পল যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে এই বিল পাশ হলে এটি ইউক্রেনকে অর্থায়নে সহযোগিতা করবে কি না, কিংবা ভবিষ্যতে অন্য কোনো সমস্যা তৈরি হবে কি না সেটি বিবেচনা করেই নতুন তহবিল পাশের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’

বিলটি নিয়ে যা যা হলো

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলেও রিপাবলিকান পার্টি ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো পদে বসেননি। আগামী ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। রাষ্ট্রীয় এই অর্থ বিলটির পক্ষে ভোট দিতে ট্রাম্প হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের আহ্বানও জানিয়েছিলেন।

তবে রিপাবলিকান কিছু কট্টরপন্থী সদস্যরা ট্রাম্পের এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তারা এই বিলটির পক্ষে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বিলটির পক্ষে ১৭৪টি ভোট পড়ে। আর বিপক্ষে ২৩৫টি। বিপক্ষে ভোট দেন ৩৮ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাও।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাতে সরকারি তহবিলের মেয়াদ শেষ হবে। বিলটি পাশ হলে তা তহবিল জোগানোর মেয়াদ বাড়াবে। একই সঙ্গে তা ঋণের সীমা (ঋণ নেওয়ার সর্বোচ্চ পরিমাণ) স্থগিত করবে।

মার্কিন আইনপ্রণেতারা অর্থ বিলটি পাশে ব্যর্থ হলে মার্কিন সরকারের কার্যক্রম আংশিক ‘শাটডাউনে’ চলে যেত।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পেছনে ইলন মাস্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলা হয়ে থাকে। ব্যয় সংক্রান্ত বিল ইস্যুতে আবারো আলোচনায় এসেছে মাস্কের প্রভাব। ট্রাম্প ও মাস্কের তাগিদের কারণেই ঐকমত্যে পৌঁছানো প্রথম বিলটি খারিজ করেছিলেন রিপাবলিকানরা। কিন্তু সংশোধন করে আনা দ্বিতীয় বিলটির বেলায় রক্ষণশীলদের অনেকে মাস্কদের কথা শোনেননি। বিপক্ষে পড়া ওই ৩৮ রিপাবলিকানের ভোটই ফলাফল নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখে। তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা