সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি সুপরিকল্পিত!
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৩৬ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ শনিবার
অনেকেই ধারণা করছেন, সচিবালয়ের অগ্নিকা-ের ঘটনা ও নাশকতামূলক কাজের পেছনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসরেরা জড়িত। তাঁরা এখনো কর্মরত রয়েছেন এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের অনেকের কাছে এখনো সচিবালয়ে প্রবেশের পাস থাকায় তাঁরা সচিবালয়ে অবৈধভাবে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন।
সচিবালয়ের অগ্নিকা-ের ঘটনাটি সুপরিকল্পিত বলে মনে করে প্রশাসন ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এ ছাড়া এমন নাশকতামূলক কাজের পেছনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে স্বৈরাচারের দোসররা এখনও কর্মরত রয়েছে। ফলে স্বৈরাচারের দোসরদের সহযোগিতায় এ অগ্নিকা- ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। অপশক্তির প্ররোচনায় এই আগুনের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। ক্যাডার কর্মকর্তারা বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, বড়দিনের ছুটির পর রাতে জনমানবহীন সচিবালয়ে সংঘটিত ঘটনাটি সুপরিকল্পিত বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে প্রতীয়মান হয়েছে। কারও কারও মতে, এমন নাশকতামূলক কাজের পেছনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট তথা স্বৈরাচারের দোসরেরা জড়িত। তাঁরা এখনো কর্মরত রয়েছেন এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের অনেকের কাছে এখনো সচিবালয়ে প্রবেশের পাস থাকায় তাঁরা সচিবালয়ে অবৈধভাবে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। কাজেই স্বৈরাচারের দোসরদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতা ও প্রবেশের ফলে সংঘটিত ঘটনাটির সঙ্গে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা আরও হয়, বিভিন্ন সময় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট-সমর্থিত আত্মগোপনে থাকা অপশক্তিকে নানা ধরনের অপপ্রচার করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা লক্ষ করা গেছে। সার্বিক বিবেচনায় সচিবালয়ে আগুনের ঘটনার পেছনে দেশবিরোধী সেই চক্র জড়িত কি না, সেটিও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সচিবালয়কে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করাও এখন জরুরি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে অপরিণামদর্শী ও অযৌক্তিক লেখালেখির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা ক্ষেত্রে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চলছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা এই অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং এমন কাজ থেকে বিরত থাকাসহ জড়িত ব্যক্তিদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।
হাসিনার নথি চাওয়ার পরই কেন সচিবালয়ে আগুন, প্রশ্ন রিজভীর
রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ‘কিংস পার্টি’ গঠনের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
হাসিনার নথি চাওয়ার পরই কেন সচিবালয়ে আগুন? এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, “গত বুধবার আমরা সংবাদপত্রে দেখেছি যে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি চাওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই নথি চাওয়ার পরেই গভীর রাতে (সচিবালয়ে) এই আগুন।ৃএটা জনগণের মধ্যে বিরাট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”
উচ্চ পর্যায়ের ‘নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে দিয়ে’ আগুনের ঘটনা তদন্তের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, “কারণ বুধবার শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের কিছু নথি চাওয়ার পর সচিবালয়ে অনেক নথি পুড়ে যাওয়া এবং সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকা- মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
“মধ্যরাতের আগুন নিয়ে মুখরোচক কথা বলতে চাই না। এই আগুনে অনেক নথিপত্র পুড়ে গেল।” রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় এমন কথাই বলছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।
দশ তলা ওই ভবনেই অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে।
রাতে অগ্নিকা-ের সময় দশ তলা ওই ভবনের উপরের দিকের একটি ফ্লোর এমাথা-ওমাথা জ্বলতে দেখা যায়। এ অগ্নিকা-ের কারণে নিয়ে অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সন্দেহ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৃহস্পতিবার সকালে এক ফেইসবুক পোস্টে বলেন, “স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।
“আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি। আমাদেরকে ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।”
জাতীয় নাগরিক কমিটি অগ্নিকান্ডকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে।