মামলা হতে যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৪:১১ এএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ সোমবার
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগত নাগরিকত্ব বিলুপ্ত করতে নব্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম টং। এই ইস্যুটি তার জন্য শুধু পেশাগত নয়, বরং ব্যক্তিগতও। ট্রাম্পের বিতর্কিত অভিবাসন-বিরোধী নীতি আদালতে আটকে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি ।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তিদের স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্বের সংবিধানসম্মত অধিকারকে আঘাত করবে। এটি অনেকের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মনে করেন, এই প্রস্তাব সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর সরাসরি লঙ্ঘন এবং অভিবাসীদের অধিকার হরণ করবে।
এই আইনি লড়াইয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তার নিজের পরিবার অভিবাসনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল। তিনি মনে করেন এই আইন তাদের মতো অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাধা তৈরি করবে। তিনি বলেছেন, 'আমাদের সংবিধান সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে এবং আমি এটি রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।'
এই পদক্ষেপটি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়েছিল, কারণ এটি অভিবাসন নীতির ভবিষ্যত নির্ধারণে গভীর প্রভাব ফেলছে।
৫১ বছর বয়সী অ্যাটর্নি টং একজন ডেমোক্র্যাট। ২০১৯ সাল থেকে কানেকটিকাটের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি চীন ও তাইওয়ান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা অভিবাসীদের সন্তান। তিনি তাদের পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও, তিনি কানেকটিকাট রাজ্যব্যাপী নির্বাচিত প্রথম এশীয় আমেরিকান।
এক সাক্ষাৎকারে টং বলেন, 'আমি আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে কাজ করে বড় হয়েছি। এক প্রজন্মের মধ্যেই সেই রেস্টুরেন্টের রান্নাঘর থেকে কানেকটিকাটের অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার যাত্রা সম্ভব হয়েছে। এই রকম ঘটনা শুধুমাত্র আমেরিকাতেই সম্ভব।'
ট্রাম্প তার প্রচারণার সময় ঘোষণা করেছিলেন, তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই তিনি জন্মগত নাগরিকত্ব বিলুপ্ত করার উদ্যোগ নেবেন, যা অবিলম্বে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। টং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন 'আমি প্রথম মামলা দায়ের করব'।
টং ২৩ জন ডেমোক্র্যাটিক অ্যাটর্নি জেনারেলের একজন যারা অভিবাসন, সমকামী, উভকামী, ট্রান্সজেন্ডার এবং কুইয়ার সম্প্রদায় ( এলজিবিটিকিউ) সম্প্রদায়ের অধিকার, পরিবেশনীতি এবং গর্ভপাতের মতো বিষয়গুলোতে ট্রাম্পের প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।
জন্মগত নাগরিকত্বের বিষয়ে আইনি বিশেষজ্ঞদের বেশিরভাগই মনে করেন, সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, 'যে সকল ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছেন বা নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং এখানের বিচারব্যবস্থার অধীনে রয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক
ট্রাম্প বলেছেন, একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত করবেন যে যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনিভাবে বসবাসকারী অভিভাবকদের সন্তানরা নাগরিকত্ব পাবে না। তবে এই নীতি পূর্ববর্তী সময়ে প্রযোজ্য হবে না।
অন্যদিকে, টং মনে করেন এই প্রস্তাব ১৪তম সংশোধনীর সরাসরি লঙ্ঘন এবং অভিবাসীদের জীবন ও সম্প্রদায়ের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। 'আসুন সত্যি কথা বলি-আমরা সবাই আমেরিকান। প্রত্যেকের সমান অধিকার আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মূল ভিত্তি এবং মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই হয়ে দাঁড়াবে।