মঙ্গলবার   ০৭ জানুয়ারি ২০২৫   পৌষ ২৩ ১৪৩১   ০৭ রজব ১৪৪৬

ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ যুগের অবসান

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩৪ এএম, ২ জানুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার

ট্রানজিট বন্ধ করল ইউক্রেন


খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের প্রথম দিন ইউরোপের মানুষের জন্য বড় এক দুঃসংবাদ নিয়ে এলো। রাশিয়া থেকে ইউক্রেনের ওপর দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে তারা যে তরল গ্যাস সস্তায় পেতেন, তার সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ইউক্রেন এ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

এর মাধ্যমে ইউরোপের জ্বালানি বাজারে কয়েক যুগের রুশ আধিপত্যের অবসান ঘটল। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ চললেও গত তিন বছর এ সরবরাহ অব্যাহত ছিল। এর জেরে চলতি শীত মৌসুমে ইউরোপে জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে। তবে ইউরোপীয় কমিশন বলছে, এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি আগে থেকে ছিল।

গতকাল বুধবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গ্যাস সরবরাহ কোম্পানি গ্যাজপ্রম নিশ্চিত করেছে, তাদের গ্যাস আর ইউরোপে যাচ্ছে না। গ্রিনিচ মান সময় ৬টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার বেলা ১১টা) এ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। ইউক্রেনের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি ছিল, যা নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায় দেশটি। যে পাইপের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস পাঠানো হতো, সেগুলো সোভিয়েত ইউনিয়ন যুগে স্থাপিত।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর জেরে ইউরোপে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে। জীবনযাত্রা খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

গ্যাস সরবরাহ বন্ধের নেতিবাচক প্রভাব আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়ার এ গ্যাস ইউক্রেনের ওপর দিয়ে অস্ট্রিয়া, স্লোভানিয়ার মতো দেশগুলোতে যেত। তবে হাঙ্গেরিতে এ সরবরাহ বন্ধ হচ্ছে না। দেশটি কৃষ্ণসাগরের মধ্য দিয়ে দুটি পাইপলাইন ব্যবহার করে তুরস্কের ওপর দিয়ে গ্যাস নিজ দেশে নেয়। তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো থাকায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

চলমান পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র বলেন, রাশিয়া ছাড়া অন্য ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে ইউরোপ যথেষ্ট সংবেদনশীল। এ অবস্থায় ২০২২ সাল থেকে তরলীকৃত প্রকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকেছে ইউরোপ। সূত্র জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করে আসছে। এর অংশ হিসেবে নরওয়ে থেকে পাইপলাইনে এবং কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি সংগ্রহের দিকে ঝুঁকেছে দেশটি।

গ্যাস সরবরাহ চুক্তি নবায়ন না করা প্রসঙ্গে ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী জার্মান গ্যালুশচেঙ্কো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার গ্যাসের ট্রানজিট বন্ধ করে দিয়েছি। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। রাশিয়া তাদের বাজার হারাচ্ছে। তারা অবশ্যই আর্থিক লোকসানে পড়বে।’

এক হিসাবে দেখা গেছে, সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় রুশ কোম্পানি গ্যাজপ্রম বছরে ৫০০ কোটি ডলার গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে বঞ্চিত হবে। তবে ক্ষতি হবে ইউক্রেনেরও। তারা বছরে ৮০ কোটি ডলার ট্রানজিট ফি হারাবে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যা পরবর্তী সময়ে রাশিয়া হয়েছে– প্রায় পাঁচ দশকের চেষ্টায় ইউরোপে গ্যাসের বাজার গড়ে তোলে। ২০২১ সালে ইউরোপের মোট গ্যাস সরবরাহের ৪৫ শতাংশই ছিল রাশিয়ার। পরে তা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। যুদ্ধের কারণে গ্যাজপ্রমের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এর আগে বেলারুশের মধ্য দিয়ে যাওয়া ইয়ামাল-ইউরোপ পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ২০২২ সালে বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে জার্মানি সরবরাহ করা গ্যাল লাইনটি কে বা কারা বিস্ফোরণে ধ্বংস করে দেয়। তবে সবচেয়ে বেশি গ্যাস ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে পাইপলাইনে সরবরাহ করত রাশিয়া। এতে খরচও কম পড়ত।