বুধবার   ০৭ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৩ ১৪৩২   ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৬

চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পান্থপথের ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১১:৩০ এএম, ৫ জানুয়ারি ২০২৫ রোববার

বিএনপির কমিটিতে ব্যবসায়ীদের লিখিত অভিযোগ

রাজধানীর পান্থপথের পিদিম ট্রেড নামের ফার্নিচার বিক্রির প্রতিষ্ঠানের মালিক জাকির হোসেন। তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কাছে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন ১৩/৪, পান্থপথ (বসুন্ধরা শপিং সিটির বিপরীতে) ঠিকানায় পিদিম ট্রেড নামে ফার্নিচার দোকানের মালিক তিনি। কলাবাগান থানার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশের ড্রয়ার থেকে ২০ হাজার টাকা লুট করে। এখন পর্যন্ত সে চাঁদার দাবিতে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। মান্নানের দাবি, তার কাছে মাসিক ভাড়া বাবদ টাকা দিতে হবে।’

এরকম পান্থপথ এলাকার অন্তত অর্ধশত ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়েছে। এদের মধ্যে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে কয়েক জন ব্যবসায়ীর নাম জুলাই-আগস্ট আন্দোলন সংশ্লিষ্ট দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু মামলায় আসামির নাম ঢুকিয়ে ক্ষান্ত হয়নি ঐ চাঁদাবাজ চক্রটি। রীতিমতো এক ব্যবসায়ীকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। রনি নামের ঐ ব্যবসায়ী সৌখিন ফার্নিচারের মালিক। বর্তমানে তিনি কলাবাগান থানায় দায়ের করা একটি মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি।

এসব অভিযোগ নিয়ে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হচ্ছে তার পুরোটাই মিথ্যা ও সাজানো গল্প। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন একটি চক্র চেষ্টা করছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আমাকে হেয় করতে। এসব চাঁদাবাজির অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করে প্রতিশোধ নিতে চায় ঐ চক্রটি। কারণ আমি বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। এখন দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে।’

চাঁদাবাজি নিয়ে পান্থপথ এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। গতকাল কয়েক জন ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সরকার আসবে সরকার যাবে। আমরা তো ব্যবসায়ী। আমরা সরকারকে  ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে কর দিই। আমরা আমাদের ব্যবসা করে যেতে চাই। পুলিশকে অভিযোগ দিলেই আমাদের প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে।’

পান্থপথের বড় প্রতিষ্ঠান এসআর ফার্নিচারের মালিক সাঈদের কাছে চাঁদাবাজ চক্রটি ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। এর পর থেকে সাঈদ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার নামও কলাবাগান থানায় দায়ের করা একটি মামলায় দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

আরেক জন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, চাঁদাবাজ চক্রটি মীম ফার্নিচারের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা না দিলে ঐ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে।

পান্থপথ এলাকার বড় মিয়া নামে এক চাঁদাবাজ ফুটপাতের সোনা মিয়া, লাকিসহ ১০ জনের দোকান দখল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই দোকানগুলোর মাসিক পজিশন আরেক জনের কাছে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সোনা মিয়াসহ অন্যরা এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

পান্থপথের মেহেজাবিন ট্রেডার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা নেয় ঐ চক্রটি। চাঁদা দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি এখন নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারছে। ‘তারা এতেই খুশি’ বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

মনু নামে একজন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদাবাজ চক্রটি ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এক সপ্তাহ পর মনু ঐ গ্রুপটিকে ২ লাখ টাকা চাঁদা দেন। গতকাল এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি ও কলাবাগান থানা শ্রমিক দল একজোট হয়ে চাঁদাবাজি করছে। চাঁদা না দিলে তো আমাকে ব্যবসা করতে দেবে না। তাই চাঁদা দিয়েছি।

এ ব্যাপারে কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ এই চাঁদাবাজ গ্রুপটিকে খুঁজছে। আসলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে চাইছে না। আমি নিজে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি। এই চাঁদাবাজ গ্রুপটি বিএনপি নেতা ‘গোলাম মওলার’ নাম ব্যবহার করছে। তবে ব্যবসায়ীরা গোপনে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে তাদের নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে। তদন্ত করে ওই চাঁদাবাজ গ্রুপটিকে গ্রেফতার করা হবে।