শুক্রবার   ১০ জানুয়ারি ২০২৫   পৌষ ২৬ ১৪৩১   ১০ রজব ১৪৪৬

কমিশন কাটায় কমছে উবার

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫২ এএম, ৯ জানুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার

  • ইচ্ছে মতো কমিশন কাটায় গাড়ি চালাতে অনীহা চালকদের
  • ৩০ থেকে ৪০ শতাংশও কেটে নেয় কমিশন
  • অনেক চালক চুক্তিতে চালান গাড়ি


উবার মোবাইল স্মার্টফোনের অ্যাপ-ভিত্তিক ট্যাক্সি সেবার নেটওয়ার্ক। মূলত যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক অনলাইন পরিবহন নেটওয়ার্কের একটি কোম্পানি। বাংলাদেশে শুরুতে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকায় অ্যাপ-ভিত্তিক এই সেবার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে সম্প্রতি উবার ইচ্ছেমতো কমিশন কাটায় চালকদের মধ্যে অনীহা দেখা গেছে অ্যাপস-ভিত্তিক গাড়ি চালাতে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উবারের কোনো নিজস্ব ট্যাক্সি নেই। উবারের কিছু নির্ণায়ক যোগ্যতা পূরণ করে ব্যক্তিগত গাড়ি আছে এমন যে কোনো ব্যক্তিই উবার টিমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একজন চালক ও যাত্রী নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে নিতে পারেন। উবারের ফ্রি অ্যাপটির মাধ্যমে একজন যাত্রী নিজের অবস্থান জানিয়ে একটি ট্যাক্সি ডেকে আনতে পারেন। পৃথিবীর ৬৩টি দেশ ও ৭৮৫টিরও বেশি শহরে উবারের সেবা চালু আছে। তবে বাংলাদেশের উবারের  কার্যক্রম ভারত থেকে পরিচালিত হয়। ফলে চালক এবং যাত্রীরা তাদের সমস্যাগুলো সেভাবে জানাতে পারেন না উবারের কাছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, আগে ওয়ার্ল্ডওয়াইড স্মার্টফোন অ্যাপ-ভিত্তিক ট্যাক্সিসেবা এই উবারের বেশ চাহিদা ছিল। এই একটি অ্যাপস ব্যবহার করে প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করা যায়। ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে চাইলে খুব সহজেই যাওয়া যায় এই সেবা ব্যবহার করে। তাছাড়া উবার প্রাইভেটকার এক্স করোলা, এলিয়েন, এক্সিও প্রিমিও, টয়োটা, প্রবক্স গাড়ির পাশপাশি নোয়া মাইক্রোবাসও অন্তর্ভুক্ত করায় অনেকের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু ইচ্ছেমতো কমিশন কাটায় উবারের প্রতি অনীহা চলে আসছে চালকদের। ২২ থেকে ২৪ শতাংশ কমিশন কাটলেও মাঝেমধ্যেই তারা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন কেটে নেয় চালকদের থেকে। যার জন্য আগের মতো প্রাইভেটকার পাওয়া যাচ্ছে না উবারে। সেই সঙ্গে সিএনজিও সংকট রয়েছে। তবে মোটরসাইকেলের সংখ্যা স্বাভাবিক রয়েছে।

মো. ইয়ামিন নামের উবার অ্যাপস ব্যবহারকারী ধানমন্ডি ১৫ নম্বর থেকে গুলশান নিকেতন এলাকায় একটি প্রডাকশন হাউজে যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টা ধরে গাড়ি খুঁজলেও পাননি। তিনি বলেন, উবারে এখন গাড়ি সংকট। আগে গাড়ি সার্চ করলে অনেক গাড়ি চলে আসত। এখন গাড়ি পাওয়া যায় না। আর পেলেও গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় অনেক চালক সব রুটে যেতে চান না। ফলে গাড়ি না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এসব অভিযোগ দেখার যেন কেউ নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই যাত্রী।

ধানমন্ডির একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি চলে যাওয়ার পর নিয়মিত উবার চালাতেন এস এম ফয়েজ নামের এক রাইড শেয়ার করা চালক। তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে এই উবার চালাই। কিন্তু এখন আগের মতো উবার চালাই না। তার বড় কারণ উবার এখন তার ইচ্ছেমতো চলে। চালকদের বিষয়গুলো তারা আমলে নেয় না। নিজের গাড়ি নিজের সব কিছু কিন্তু শুধু মাত্র একটি অ্যাপস ব্যবহার করায় তারা (উবার) আমাদের থেকে ইচ্ছেমতো টাকা কেটে নেয়। মাঝেমধ্যে দেখা যায় প্রতি ট্রিপে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন কেটে নেয়। গত রবিবার একটি ট্রিপে ২৬১ টাকা রাইড শেয়ারের বিল আসে। কিন্তু উবার আমার কাছ থেকে ১১৫ কেটে নেয়। এই যে হুটহাট করে টাকা কেটে নেয় সে সব অভিযোগ জানানোর জায়গা আমাদের নেই। যার জন্য এখন রেন্ট-এ কার (চুক্তিতে) বেশি গাড়ি চালানো হয়। উবারে আগের মতো চালাই না।

উবার রেটিংয়ে ৪.৯ পাওয়া একজন চালক হলেন মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা যারা উবারে গাড়ি চালাই তাদের কিন্তু গাড়ির যাবতীয় বিষয় নিজের দেখতে হয়। সব কিছুর খরচ আমাদেরই বহন করতে হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও উবার আমাদের মতো চালকদের ব্যাপারে সেভাবে চিন্তা করে না। অন্য অ্যাপস-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিংগুলো থেকে উবার আমাদের থেকে বেশি টাকা কমিশন নেয়। আমাদের নানা অভিযোগ বলার মতো কোনো সঠিক জায়গা আমরা পাই না। আর কোনো অভিযোগ দিলেও সেটির সমাধান খুব সহজে আমরা পাই না। আমাদের একে অপরের সঙ্গে কোনো মিট আপ নেই। এই রকম নানা অভিযোগের জন্য উবার দেশে জনপ্রিয়তা হারাবে বলে জানান তিনি।  

বালাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে কোনো উন্নত দেশে কোনো সমস্যা হলে সরকার সেটি সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো অন্যরকম। যেখানে উবারের মতো প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন অনিয়ম করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ নেই। তারপরও সরকার এই উবারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারের উচিত খুব দ্রুত উবারের বিরুদ্ধে যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা।
 
সার্বিক বিষয়ে দেশ রূপান্তর থেকে উবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উবার কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কোনো মতামত দিতে রাজি হয়নি।