দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্যে দুই ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ১২:৪৪ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে দুই কম্পিউটার ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় মামলা হয়েছে। এজাহারভুক্ত এক আসামিসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষের অভিযোগ, কম্পিউটার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন গ্রুপ। দিতে অস্বীকার করলে দলবল নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে দুই ব্যবসায়ী নেতার ওপর হামলা করা হয়।
তবে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির দ্বন্দ্ব থেকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুটি গ্রুপের একটির নেতৃত্বে রয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও অপরটির সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে এলিফ্যান্ট রোডের ইসিএস কম্পিউটার সিটির (মালটিপ্ল্যান সেন্টার) সামনের রাস্তায় ধারালো ছুরি ও চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময়ে এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার সমিতির সভাপতি ওয়াহিদুল হাসান দিপুর ওপরও হামলা করা হয়। দুর্বৃত্তরা তার গাড়ি ভাঙচুর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় এহতেশামুলকে ধানমন্ডির বেসরকারি পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন। ওয়াহিদুল হাসান চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে যান।
এ ঘটনায় শনিবার মধ্যরাতে ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে নিউমার্কেট থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন ওয়াহিদুল হাসান দিপু। মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় ধানমন্ডির শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক ওরফে ইমনকে। অন্য আসামিরা হলেন- মুন্না, আসিফ ওরফে ঝন্টু, একেএম চঞ্চল, খোকন, সাইদ আসাদ, জসিম ওরফে কলা জসিম, তুষার ওরফে কিলার তুষার, তৌফিক এহসান ও জাহিদ। পুলিশ অভিযান চালিয়ে রোববার দুপুরে আসিফুল হক আসিফ ওরফে ঝন্টু ও কাউসার মৃধাকে গ্রেফতার করে। ঝন্টু এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি।
নিউমার্কেট থানার ওসি মোহসেন উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার তারিক লতিফের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করে পুলিশের একটি দল। তারা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে রোববার দুপুরে লালবাগের জগন্নাথ সাহা রোড থেকে কাউসার মৃধাকে গ্রেফতার করে। পরে হাজারীবাগ গার্লস স্কুলের কাছের একটি মেস থেকে আসিফ ওরফে ঝন্টুকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সময়ে মালটিপ্ল্যান সেন্টারের ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করে। না দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে হয়রানি করতে থাকে। এহতেশামুল হক ও ওয়াহিদুল হাসান অন্যান্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে চাঁদাবাজি ও হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এতে আসামিদের তীব্র রোষানলে পড়েন তারা। এ কারণেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের ওপর হামলা করা হয়।
মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী যুগান্তরকে জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর মার্কেটে আধিপত্য বিস্তার, দখল, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর নেপথ্যে ধানমন্ডি ও নিউমার্কেট কেন্দ্রিক দুটি শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, ৫ আগস্টের পর মালটিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ এক গ্রুপের হাতে চলে যায়। তারাই মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতি দখল করে নেয়। আরেক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন। তারাই দুই ব্যবসায়ী নেতার ওপর হামলা চালায়। আহত এহতেশামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। আহত দীপু শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের ছোট ভাই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, এক মাস আগে মালিটিপ্ল্যান সেন্টারে নির্বাচন হয়। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট একটি বিরোধ তাদের মধ্যে আগে থেকেই ছিল। আমাদের ধারণা, ওই নির্বাচনের কারণে হামলার ঘটনা হতে পারে। এছাড়া অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। আসামিদের না ধরা পর্যন্ত মূল বিষয়টা জানা সম্ভব না।
জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে- উপদেষ্টা আসিফ : যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। সরকার চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। রোববার দুপুরে এ মালটিপ্ল্যান সেন্টারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি একথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত উন্নতি ঘটেছে। এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় চাঁদাবাজির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।