ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নতুন দল
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৯:৫৭ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘোষণা হতে পারে নতুন এই রাজনৈতিক দল। দল গঠনে ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এখন সারা দেশে সাংগঠনিক সফরে ব্যস্ত। বেশিরভাগ থানা ও জেলা পর্যায়ের কমিটি এর মধ্যেই করা হয়েছে। নিজ এলাকায় তথা সংসদীয় আসনে তৎপরতা চালাতেও দেখা গেছে ছাত্রনেতাদের। রাজনৈতিক দল ঘোষণার বাকি কাজ শেষ করতে বিশেষ টিম গঠন করা হবে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের উদ্যোগেই এই দল হবে। বিভিন্ন দলের নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হতে পারে এই দল। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনাও চলছে বলে জানা গেছে। দলের নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও তারুণ্যনির্ভরই হচ্ছে দলটি। তরুণ নেতৃত্বের সমন্বয়ে বিভিন্ন কমিটি করা হচ্ছে। কমিটির সদস্যদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও ঢাকায় বয়সের সীমা ৪৫ বছরের মধ্যেই থাকতে দেখা গেছে। কমিটিতে জনপ্রিয় তরুণ ও ছাত্রনেতারা যুক্ত হচ্ছেন। জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা প্রায় ২১০টি থানা-উপজেলা কমিটি করেছি। রোজার আগেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমরা দল ঘোষণা করতে পারি। সেভাবেই আমাদের প্রস্তুতি চলছে। দলের নাম বা কারা নেতৃত্বে থাকবে সেটি এখনো ঠিক হয়নি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি যাতে আমরা নতুন দল ঘোষণা করতে পারি তা নিয়ে জোর প্রস্তুতি চলছে। দলের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র তৈরিসহ অন্য কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। দলের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে কারা থাকবেন, তা নিয়েও কাজ চলছে।’
প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা শুরু হয় গত সেপ্টেম্বরে। ৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও ‘নতুন বাংলাদেশের’ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সফল করার লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির ৫৬ সদস্যের একটি কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। প্রায় একই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বিভিন্ন জেলায় সফর শুরু করেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০টি জেলায় তারা কমিটি করেছেন। অন্যদিকে দল গঠনের আগে সব জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটি করতে চায় জাতীয় নাগরিক কমিটি। ইতিমধ্যে দুইশর বেশি কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কমিটিগুলোর কাজ শেষ করার টার্গেট তাদের।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এখন সারা দেশে সাংগঠনিক সফরে ব্যস্ত। অংশ নিচ্ছেন সভা-সেমিনারে। নিজ নিজ আসনেও দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। দল গঠনে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তারা। গত শনিবার বৈঠক করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। বৈঠকে দল গঠনের সার্বিক কার্যক্রম, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দল গঠনের জন্য একটি বিশেষ টিম গঠনের আলোচনা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি দল ঘোষণার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তারা।
নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপক্ষই অরাজনৈতিক ফোরাম হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলটি নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করবে। চাইলে ওই দুটি ফোরাম থেকে যে কেউ নতুন দলে যোগ দিতে পারবেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবেই থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। চাইলে নতুন রাজনৈতিক দলে তারা যোগ দিতে পারবে। আমাদের সঙ্গে বিপ্লবী, সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক তিন ধরনের লোকই আছেন। যারা রাজনীতি করতে চান, নতুন রাজনৈতিক দলে তারা যোগ দিতে পারবেন।’
শুরু থেকেই তারুণ্যনির্ভর দল গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম এ দুই শক্তি। সাড়াও পেয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারুণ্যের অংশগ্রহণ, গণতান্ত্রিক চর্চা ও নীতিনির্ধারণে তরুণদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলেই জাতীয় নাগরিক কমিটিতে তরুণ নেতৃত্বের সম্মিলন ঘটছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, ‘সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের একসঙ্গে করার এ প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতা, ডাকসুর সাবেক নেতৃবৃন্দ, উচ্চশিক্ষারত প্রবাসী, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ মাঠপর্যায়ের সংগঠকরা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন মতের ও বিভিন্ন পথের মানুষের এ সম্মিলনকে আরও সমৃদ্ধ করে নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে প্রতিষ্ঠা করতে জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে আমরা দেশের সর্বস্তরের মানুষের সাড়া পাচ্ছি। আমাদের দল নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। আশা করি, আমাদের এ যাত্রা ভালো হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গণসংযোগের মাধ্যমে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে তরুণদের আগ্রহ অনেক বেশি। আমাদের রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।’