বুধবার   ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   মাঘ ২৩ ১৪৩১   ০৬ শা'বান ১৪৪৬

তেল সংকট জিইয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১০:২৪ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা গত ছয় মাসে অনেকটাই কমে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে ভোগ্য পণ্যের বাজারের অস্থিতরা কাটেনি এখনো। উল্টো সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও সংকট কাটেনি। এখনো কোনো না কোনো পণ্য নিয়ে দামের জটিলতা লেগেই থাকছে বাজারে। দাম বেড়ে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে। এর মধ্যে তেল নিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ‘তেলেসমাতির’ ফলে আবারও সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে এই পণ্যটির। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামনে রমজানকে লক্ষ করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে, সংকটকে দীর্ঘায়িত করছে, সংকট জিইয়ে রেখেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের নভেম্বরে প্রতি লিটার তেলের দাম ৮ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তবে এরপরও কয়েক ধাপে সিন্ডিকেটের মধ্যদিয়ে এই সংকট আরও বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা বাজারে তেলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে প্রায়। এতে করে তাতে আগামী রোজায় তেলের দামে নতুন কোনো উল্লম্ফনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ভোক্তাদের মধ্যে। উদ্বেগ আছে খুচরা ব্যবসায়ীদেরও।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা মানুষকে জিম্মি করে বারবার তাদের দাবি আদায় করে নেন। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির দোহায় দিয়ে যে হারে দাম বাড়ান, সেই হারে কখনো দেশের বাজারে তেলের দাম কমান না। তাছাড়া আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় বছরের পর বছর জিম্মি করে ভোক্তার পকেট লুটেন মুনফাখোর ব্যবসায়ী।

সরেজমিনে গত শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার, পাড়া মহল্লা ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোম্পানিগুলো হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে তেলে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। দুই কোম্পানির তেল পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। আবার এক কোম্পানির তেল নিতে হলে তেলের সঙ্গে তাদের শর্তের পণ্য কিনতে হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্মগেট এলাকার হাজি স্টোরের মো. ইমাম হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দামের অস্থিরতা চলছে তেলের বাজারে। এর মধ্যে নতুন করে কোম্পানিগুলো পরিশোধিত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়েছে। দু-একটা কোম্পানি তেল সরবরাহ করলেও তা চাহিদা তুলনায় খুবই সামান্য। আবার এসব তেল পেতে হলে তাদের শর্ত মেনেই প্রতি লিটার তেলের সঙ্গে আটা, সুজি, চিনি ও সুগন্ধি চাল নিলেই মেলে কাক্সিক্ষত তেল।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বড়া বাজারগুলোতে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির পরিশোধিত ৫ লিটারের তেলের বোতল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ১ লিটার ও আধা লিটারের বোতলের তেল নেই বললেই চলে। আবার পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে তেল না থাকার মতো চিত্র দেখা গেছে। কোনো কোনো দোকানে তেল থাকলেও তা পরিচিত গ্রাহক ছাড়া বিক্রি করছে না।

বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা। খোলা পাম তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৭ টাকা এবং বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৬০ টাকায়।

এর আগে গত বছরের ১৫ অক্টোবর স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি না করে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক ১৫ শতাংশ হতে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ দুই পর্যায়ে মোট ১০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন করে এ মন্ত্রণালয়। পরে সেটি আমলে নিয়ে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ ও স্থানীয় উৎপাদনে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করে এনবিআর।

এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের প্রতিযোগিতামূলক বাজার এখনো গড়ে উঠেনি। তা না হলে একই পন্থায় বারবার কেন ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারের সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীলতার যথাযথ গ্যাপ রয়েছে।

তিনি বলেন, বাজারে একাধিক সংস্থা তদারকি করে। কিন্তু ভোক্তা এ থেকে কোনো সুফল পাচ্ছে না। পণ্যের দাম বাড়লেই কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু যে স্তরে কারসাজি হয়েছে, সেই স্তরে মনিটরিং হয় না। ফলে অসাধুরা এ সুযোগে ভোক্তাকে বেশি করে নাজেহাল করে তোলে। তাছাড়া দেশের আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা এ কাজ বারবার করে যাচ্ছেন। এখন পুরনো কায়দায় রোজার বাজার অস্থিতিশীল করতেই বাজারে তেলের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।