রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় কাঁচি
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৫৫ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ মঙ্গলবার
শুল্ক-কর আদায় পরিস্থিতি ভালো নয়। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার ওপর ছয় মাসের মাথায় কাঁচি চালানো হয়েছে। কমানো হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ১৭ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। ফলে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা।
গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট বা র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এমএ রাজ্জাক আমাদের সময়কে বলেন, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমনিতেই অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতি। ভ্যাট ইস্যুতে অস্থিরতা রয়েছে। মানুষের আয়ও কমে যেতে পারে। আমদানি বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে। রিজার্ভ সংকট রয়েছে। জানুয়ারি মাসও শেষ। ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হবে বলে মনে হচ্ছে না। এমন সংকটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন।
জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাস্তবতাবিবর্জিত উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়েছিল আওয়ামী সরকার। বাজেটে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না। বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে শুরুতেই বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছিল, বাজেট বাস্তবায়ন কিছুটা বাস্তবতাবিবর্জিত এবং উচ্চাকাক্সক্ষী। ফলে ঘোষিত বাজেট নিয়ে এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গবেষণা ও পরিসংখ্যানের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৭ হাজার ৭২৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস- এই তিন খাতের মধ্যে ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। আয়কর খাতে ছয় মাসে চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ১৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যেখানে গত অর্থবছর একই সময় আদায় হয়েছে ৫০ হাজার ৮৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অপরদিকে কাস্টমস খাতে প্রথমার্ধে ৬১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা। যেখানে গত অর্থবছর একই সময় আদায় হয়েছে ৪৮ হাজার ৭৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ।
আর ভ্যাট খাতে ৭৬ হাজার ৩১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। তবে গত অর্থবছর একই সময় আদায় হয়েছে ৫৮ হাজার ৩৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ভ্যাট খাতে প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান আমাদের সময়কে বলেন, অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আহরণ নিয়ে যে প্রক্ষেপণ করেছিলাম, বছর শেষে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন ব্যয় থেকে যে রাজস্ব আসার কথা, তা আসছে না। কারণ এসব প্রকল্পে কর ফাঁকি নেই। যেহেতু বড় বড় প্রকল্পের কাজ নেই, ফলে রাজস্ব আয়ও নেই। যার প্রভাব দেখা দিয়েছে রাজস্ব আহরণেও।