শুক্রবার   ৩১ জানুয়ারি ২০২৫   মাঘ ১৭ ১৪৩১   ০১ শা'বান ১৪৪৬

সিনেটে ট্রাম্পের প্রথম ধাক্কা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৯:৫১ এএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে প্রস্তাব করা বিল আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেট। গত ৯ জানুয়ারি নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে অবৈধ আদালত প্রতিক্রিয়া আইন নামের এই বিলটি পাস হলেও, মঙ্গলবার সিনেটে বিলটি আটকে যাওয়ায় সেটি এ মুহূর্তে আর আইনে পরিণত হচ্ছে না। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সিনেটে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা। ১০০ সদস্যদের সিনেটে প্রস্তাবটি পাসের জন্য ন্যূনতম ৬০টি ভোটের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বিলটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের বাধা অতিক্রম করতে পারেনি। প্রস্তাবটির পক্ষে ৪৫ আর বিপক্ষে ৫৪ ভোট পড়ে। বিলটির বিপক্ষে ডেমোক্র্যাট সদস্যদের পাশাপাশি ভোট দিয়েছেন কয়েকজন রিপাবলিকানও। তবে ডেমোক্র্যাট দলের একমাত্র সদস্য হিসেবে সিনেটর জন ফেটারম্যান বিলটির পক্ষে ভোট দেন। এজন্য তাকে প্রশংসা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ইসরায়েলপন্থি লবিগোষ্ঠী আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি। আর ডেমোক্রেটিক সিনেটর জন ওসফ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গাজায় গণহত্যার দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্টের বিরুদ্ধে, গত বছর নভেম্বরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। পাল্টা জবাব হিসেবে আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি বিল পাস করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বিলটিতে বলা হয়েছিল, অবৈধ আদালতবিরোধী আইনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলসহ অন্য কোনো মিত্র দেশের নাগরিকের বিরুদ্ধে কোনো বিদেশি ব্যক্তি তদন্ত, গ্রেপ্তার, আটক বা বিচারকাজ পরিচালনায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে ওয়াশিংটন। তবে এই বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও, ডেমোক্র্যাট সিনেটর নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করাকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা চাক শুমার বলেন, ‘আমি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির পক্ষপাতিত্বের বিরোধিতা করি এবং এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যাপকভাবে সংস্কার করতে চাই। তবে বর্তমান বিলটির খসড়ায় গুরুতর সমস্যা রয়েছে। শুমার যুক্তি দেন, এই বিল মিত্র দেশগুলো ও আইসিসির সঙ্গে কাজ করা ব্যবসাগুলোর ক্ষতি করতে পারে। তিনি রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানান বিলের ভাষা সংশোধনের জন্য নতুন করে আলোচনায় বসতে। সিনেটে বিলের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা ও রিপাবলিকান সিনেটর জন থুন বলেন, একজন ঘনিষ্ঠ মিত্রকে লক্ষ্যবস্তু বানানো আমাদের সবার জন্য উদ্বেগজনক হওয়া উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন, এখন আইসিসি ইসরায়েলিদের লক্ষ্যবস্তু করছে, কিন্তু এটি সহজেই আগামীতে আমেরিকানদের দিকেও নজর দিতে পারে। নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের পাশাপাশি একই সঙ্গে আইসিসি হামাস কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করেছে। যিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার জন্য দায়ী। তবে তেল আবিবের দাবি, তাদের হামলায় দেইফ নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা এবং আইসিসির বর্তমান ও সাবেক পরিচালনা পর্ষদ বিলটির বিরুদ্ধে সতর্কতা জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের জন্য বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল কেউই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয়। ফলে সংস্থাটির বিধিবিধান মেনে চলতেও তাদের আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবটি চলতি মাসের শুরুতে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসে অনুমোদিত হয়। প্রস্তাবটির পক্ষে ২৪৩ ও বিপক্ষে ১৪০ ভোট পড়ে। ৪৫ জন ডেমোক্র্যাট সদস্যও রিপাবলিকানদের সঙ্গে ভোট দেন। সিনেটে ভোটাভুটি বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রস্তাবের বেশিরভাগ অংশে তাদের আপত্তি ছিল না। তবে এর আওতা এতই বেশি বিস্তৃত যে, তা যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে এবং আইসিসির নিম্ন পর্যায়ের কর্মীরা তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউজে ফেরার পর থেকেই একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে আলোচনার জন্ম দিয়ে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব অনুমোদনেও নিজের নির্বাহী ক্ষমতার অধিকার প্রয়োগ করবেন কি নাÑ তা জানতে রয়টার্স হোয়াইট হাউজের সাথে যোগাযোগ করলেও সে অনুরোধে সাড়া দেওয়া

হয়নি। এর আগে ট্রাম্পের জারি করা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের নির্বাহী আদেশ ও ফেডারেল তহবিল বন্ধের আদেশ সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আদালত।