রোববার   ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   মাঘ ১৯ ১৪৩১   ০৩ শা'বান ১৪৪৬

ব্যাংক লুটের টাকা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:০৫ এএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রোববার

ব্যাংক লুটের টাকা গেছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাবে। গত সরকারের মেয়াদে ব্যাংক দখল করে যারা অর্থ লুটপাট করেছে তাদের মধ্যে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, পি কে হালদার সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকার জোগান দিয়েছে। এস আলমের দখলে থাকা ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক থেকেও সিএসআরের (সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল) টাকা গেছে এই ফাউন্ডেশনের হিসাবে। এর বাইরে আরও কয়েকটি বড় গ্রুপ থেকেও টাকার জোগান দেওয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক লুটের দায়ে অভিযুক্ত পি কে হালদারও সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পুত্র কন্যা, বোন ও তার ছেলে মেয়েসহ সরকারের ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতির তথ্য সন্ধানে নামে বিভিন্ন সংস্থা। এতে তাদের নামে-বেনামে ব্যাপক দুর্নীতি ও টাকা পাচারের চিত্র বেরিয়ে আসতে থাকে। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামেও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ্যে আসে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পুতুলসহ শেখ পরিবারের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট নেওয়ার অভিযোগে মামলা করে। পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের অনিয়মও তদন্ত করছে সরকারের একাধিক সংস্থা। এর মধ্যে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে সব ধরনের লেনদেনের তথ্য চেয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ওইসব তথ্য বিএফআইইউতে পাঠিয়েছে। বিএফআইইউ সেগুলো সমন্বয় করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় সূচনা ফাউন্ডেশন। এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। মানসিক প্রতিবন্ধী ও অটিজমে আক্রান্তদের সহায়তা করাই ছিল এর অন্যতম কাজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে জমা হয়েছে ১৭৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি খরচ করেছে ১১৪ কোটি টাকা। বাকি ৬৫ কোটি টাকা জমা আছে। ওই অর্থসহ হিসাবটি এখন জব্দ অবস্থায় আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপ সাত ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করে লুটপাটের মাধ্যমে টাকা পাচার করেছে। এই গ্রুপের হিসাব থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের টাকা গেছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ থেকেও সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকার জোগান দেওয়া হয়েছে। এস আলম গ্রুপের দখলে থাকা ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে সিএসআরের (সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল) টাকা গেছে সূচনা ফাউন্ডেশনের হিসাবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক লুটের দায়ে অভিযুক্ত পি কে হালদার। তিনি আমানতকারীদের অর্থ লুটের পাশাপাশি দেশ থেকে টাকাও পাচার করেছেন। দেশ থেকে পালিয়ে এখন ভারতের জেলে রয়েছেন। পি কে হালদারও এই ফাউন্ডেশনে টাকার জোগান দিয়েছেন। এর বাইরে আরও কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ওই সংস্থাটিতে টাকার জোগান দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ব্যাংকের সিএসআরের টাকার একটি অংশ সূচনা ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল, সেন্টার ফর রিসার্স অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ব্যাংক হিসাবেও গেছে। সংস্থাটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আন্তঃব্যাংক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লেনদেন পরিচালনার জন্য গঠিত ‘বিনিময়’ নামে যে প্ল্যাটফর্মটি রয়েছে তার নেপথ্যের মালিকানায় ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।