নিজের জালেই ফাঁসছেন ট্রাম্প?
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ১২:৪৪ এএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সোমবার
কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে বর্তমান হারের চেয়ে বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে এই নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তার এই শুল্কনীতি নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আর্থিক বিশ্লেষকরা।
এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে বলেই ধারণা করেছেন তারা। দেশজুড়ে মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি ও ডলারের অবমূল্যায়নের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
এছাড়া চীন, মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে শুল্ক আরোপ নতুন করে বিশ্বের বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কাকে উসকে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।
ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে, শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসছে। কিন্তু অনেক বিশ্লেষক দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করছেন। শুল্কযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রও ভুগবে বলে মনে করছেন তারা।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সে সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। ফলে মার্কিন শ্রমজীবীরা চাপে পড়বেন। ভোক্তাদের বেশি অর্থে পণ্য কিনতে হতে পারে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জোসেফ স্টিগলিজ বলেছেন, স্পষ্টভাবে সব অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এ ধরনের শুল্ক আরোপের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি পুরো বিশ্বের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। একই সুরে কথা বলেছেন পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্কুস নোল্যান্ড। তিনি বলেছেন, এ ধরনের শুল্ক আরোপ মার্কিন অর্থনীতির হতাশাজনক প্রবৃদ্ধির কারণ হতে পারে। একইসঙ্গে বাড়বে মূল্যস্ফীতিও। আর ভুক্তভোগী দেশগুলো যদি পালটা পদক্ষেপ নেয় তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
শনিবার দ্য কনভারজেশনের প্রতিবেদন জানিয়েছে, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক আরোপ বৃহৎ বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কাকে উসকে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডা ও মেক্সিকোর বাণিজ্য বেশ চমৎকার। বিশেষ করে অটোমোবাইল, জ্বালানি, কৃষি ও মার্কিন ভোক্তাদের জন্য পণ্য সরবরাহ করে থাকে এ দুই দেশ। শুল্ক আরোপ এসব খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এদিকে শুল্ক আরোপের জেরে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পালটা ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা, মেক্সিকো ও চীন। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউম ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে পালটা ব্যবস্থা নেবে তার দেশ। শুল্ক আরোপসহ নিজস্ব অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে এই পালটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ১৫৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে তার সরকার।
মঙ্গলবার থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর এই শুল্ক কার্যকর হবে। আর বাকি ১২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ কার্যকর হবে ২১ দিনের মধ্যে। ট্রুডো আরও বলেছেন, আমার বলতে দ্বিধা নেই, আসছে দিন ও সপ্তাহগুলোতে আমাদের দেশকে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে। আমি জানি, কানাডার নাগরিকরা হয়তো উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। আমরা এটা করতে চাইনি। কিন্তু কানাডিয়ানদের স্বপক্ষে দাঁড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সফল অংশীদারিত্বের জন্য আমরা পিছু হটবো না। ট্রুডোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে কানাডার নেতারা সবাই একমত বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনুরূপ পালটা ব্যবস্থা নেবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপে চীন ভীষণ অসন্তুষ্ট। তারা দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতির গুরুত্বর লঙ্ঘন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনুরূপ পালটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।