ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন চীনা ছাত্রীর
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:১০ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মঙ্গলবার
আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি কেন ১৯৫২ সালে তরুণ বাঙালিরা এই সুন্দর ভাষার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা। তাদের কারণেই আজ আমি এই সুন্দর বাংলা ভাষা শিখতে এবং সুন্দরভাবে বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলতে পারি। এমন অভিব্যক্তিই প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বাংলা ভাষা শিখতে সুদূর চীন থেকে আসা ছাত্রী ছেন ছেন।
ছেন ছেন বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে দুই সেমিস্টার ধরে বাংলা ভাষা শিখছি। এখানে আমার শিক্ষক, সহপাঠী এবং সমৃদ্ধ ক্লাসরুমের সময়টা আমার খুব ভালো লাগে। যদিও আমি অনেক দূরে থাকি, তবুও প্রতি সপ্তাহে ক্লাসে যাওয়ার সময়টা আমার খুব ভালো লাগে। উত্তরা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হলে ১৪টি সাবওয়ে স্টেশন অতিক্রম করতে হবে। জানালা দিয়ে দেখা যাবে যে ঢাকার ভূখণ্ড প্রশস্ত থেকে ঘনবসতিপূর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে।
যতই বাংলা সংস্কৃতি আবিষ্কার করি ততই বাংলা ভাষার প্রেমে পড়ে যাই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আবিষ্কার করি এবং ধীরে ধীরে বাংলা ভাষার প্রেমে পড়ে যাই। আমি বাংলা সাহিত্য, নাটক, কবিতা এবং বিশেষ করে গান পছন্দ করি। শুধু বাংলা ভাষা শেখার মাধ্যমেই এই রচনাগুলোর সৌন্দর্য আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব। কিন্তু আমি বাংলা ভাষায় এখনো খুব কাঁচা। আমি প্রায়ই খবরের কাগজ পড়ি কিন্তু জানি না এটা কী বলছে। আমি নাটক দেখি কিন্তু অর্ধেক বুঝতে পারি। আশা করি আমি দ্রুত আরও ভালোভাবে বাংলা ভাষা শিখতে পারব যাতে আমি বাংলাদেশকে আরও বেশি উপভোগ করতে পারব। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বাংলা কোর্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার ধারণাও শূন্য থেকে সব ধরনের জ্ঞানে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
বাংলা ভাষা নিয়ে কিছু মজার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ট্রাফিক বাংলা যুক্তবর্ণের মতো যা আমার কাছে কঠিন মনে হয়। বাংলা ভাষা শেখার পর রাস্তায় মানুষজন যখন ঝগড়া করে তখন কিছু আমি বুঝতে পারি। রাস্তায় সবার ভাষাগত দক্ষতা দেখে আমি সবসময়ই অবাক হই। অনেক সময় তারা কিছু মজার মন্তব্য করে, যা মাঝে মাঝে আমাকে হাসিয়েও ফেলে। বাংলাদেশিদের প্রাণশক্তি মুগ্ধকর মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, যার হৃদয় বিশাল। অনেকেই বলে যে, বাংলাদেশিরা খুব বন্ধুসুলভ; কিন্তু আমার কাছে যা বেশি মনোমুগ্ধকর মনে হয় তা হলো বাংলাদেশিদের প্রাণশক্তি। আমার দৃষ্টিতে, বিশৃঙ্খলার মধ্যেও ঢাকার নিজস্ব সম্প্রীতি রয়েছে। ঢাকার বাইরে রয়েছে অনন্য ও নির্মল গ্রামীণ সৌন্দর্য। আমি এমন কিছু শহর ঘুরেছি যেখানে ঢাকার দ্রুতগতির মধ্যে কিছুটা শান্ত সময় উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছি। আমার বাংলা শেখার যাত্রা, বাংলাদেশে আমার জীবনের মতো, চ্যালেঞ্জ, অসুবিধায় পূর্ণ, কিন্তু বিশেষ এবং সুন্দরও।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি কেন ১৯৫২ সালে, তরুণ বাঙালিরা এই সুন্দর ভাষার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা। তাদের কারণেই আজ আমি এই সুন্দর বাংলা ভাষা শিখতে এবং সুন্দরভাবে বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলতে পারি এবং তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি।