বুধবার   ১২ মার্চ ২০২৫   ফাল্গুন ২৮ ১৪৩১   ১২ রমজান ১৪৪৬

গুঁড়িয়ে দেয় হলো ৩২ নম্বর

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:৫৫ এএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার


 

শেখ হাসিনাকে বিতাড়নের ছয় মাস পর বাংলাদেশ ফের কেঁপে উঠলো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বুলডোজার মিছিল’ নামের এক কর্মসূচি দিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ধ্বংস করা হয়েছে। ঐতিহাসিক বাড়িটির ফটক ভেঙ্গে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। আসবাবপত্র, মূল্যবার দলিলপত্রসহ সবকিছু তছনছ করে। তৃতীয় তলায় একটি কক্ষে আগুন দেখা যায়। সেখানে সম্ভবত দুস্প্রাপ্য দলিরপত্র পোড়ানো হচ্ছিল। বইপত্রও পোড়ানো হয়। হাতুড়ি, শাবল, রডসহ দেশি সরঞ্জাম দিয়ে বিশাল শক্ত বহুতল ভবন ভাঙতে না পেরে এককেবেটর ডাকা হয়। তারপরও শক্তিশালী বিল্ডিংটি ভাঙা কঠিন হয়ে পড়ে। এত ক্ষোভ কেন এই ভবনের প্রতি তা এখনও অজানা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বন ভবনে আগুন ও ভাংচুরের পর ‘সুধাসদন’ নামে শেখ হাসিনার বাড়িতেও হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। এসব হামলার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার বাইরেও আওয়ামী নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালানো হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটলে ধানমন্ডি-৩২ নম্বর বাড়িতে প্রথম হামলা হয়েছিলো। বাড়িটির একটি একটি ঐতিহাসিক দিক হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাড়িতে থেকেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মহান নেতা স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি সরকারি বাড়িতে থাকেননি। তিনি ৩২ নম্বর বাড়িতে থেকেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আন্দোলনের অনেক পরিকল্পনাই এই বাড়িতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাড়িটিতে হামলা হলেও ৩২ নম্বর বাড়িকে ধ্বংস করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে হত্যা করা হয়। শেখ মুজিব নিহত হবার পর তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর হিসাবে অভিহিত করা হয়। তবে এবার শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর বাড়িকে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের তীর্থভূমি’ অভিহিত করে তাতে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
বুধবার রাত ৮টার দিকে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বিক্ষুব্ধরা বাড়িটির ভেতর ঢুকে পড়ে। এ সময় তাদের সেখানে ভাঙচুর করতে দেখা গেছে। এরপর রাত পৌনে ৯টার দিকে বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ৩২ নম্বরে ঢোকার মুখে মিরপুর রোডে অবস্থান করতে দেখা গেছে। পরে রাত ১০টা ৫০ মিনিটে বাড়ির সামনে এসকেবেটর আনা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সারারাত তান্ডব চলা ৩২ নম্বর ও তার আশেপাশ শান্ত। ধ্বংসস্তূপে এক দুজন মানুষ উঠে ইট সরানোর কাজ করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা সর্বশেষ অবস্থা দেখাতে লাইভ করছেন। শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন দেওয়া হয়।
এখানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন জানান, তিনি ফজরের নামাজ পড়ে এখানে এসেছেন কৌতূহল থেকে। হাজারীবাগ বাসিন্দা এই দর্শনার্থী বলেন, “কাল রাতে আসতে পারিনি, শেষ পর্যন্ত কী রকম লাগছে জায়গাটা সেটার সাক্ষী হতে এসেছি।” অনেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িকে গুঁড়িয়ে দেবার জন্য শেখ হাসিনার সোস্যাল মিডিয়ায় ভাষন দেওয়াকে দাবি করেন।
গত রাতে ভাঙচুরের আগে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, “স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আজকে ছাত্রলীগের ব্যানারে জাতির সামনে ভাষণ দেবে। আমরা এ দেশে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার কোনো অস্থিত্ব রাখব না।”
তারা বলেন, “যারা ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল সেসব ফ্যাসিবাদীদের কোনো চিহ্ন বাংলাদেশের মাটিতে রাখতে চাই না। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে তার শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”
 
এর আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে বুধবার রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডি অভিমুখে কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স।
ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগের বিভিন্নস্তরের নেতা-কর্মীদের ্ওপর হামলা হয়েছে। বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমুর বাসভবনে হামলা, ভাংচুর হয়েছে। তার বাসভবন ভাঙ্গতে এসকেবেটর ব্যবহার করা হয়। রাজশাহীতে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাসভবন ভাঙ্গা হয়। খুলনায় শেখ ভবন ভাংচুর করা হয়। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হতে পারে।