বুধবার   ১২ মার্চ ২০২৫   ফাল্গুন ২৮ ১৪৩১   ১২ রমজান ১৪৪৬

আইএমএফের ঋণের ৪র্থ কিস্তি ঝুলে যেতে পারে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৯:১২ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মঙ্গলবার

চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাওয়ার অপেক্ষয় রয়েছে। তবে শর্তের জালে ঝুলে যেতে পারে চতুর্থ কিস্তি। আইএমএফের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলারের দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এই শর্ত পূরণ করলেই আগামী মার্চ মাসে ঋণ কর্মসূচির আওতায় আগের তিনটি কিস্তির পর চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ বাংলাদেশের জন্য ছাড় করা হবে। নয়তো সংস্কারের জন্য জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে রবিবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির জন্য সরকার মরিয়া নয়। আইএমএফের সঙ্গে মার্চের আগে সরকারের আলাপ হবে। আগামী মার্চে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হবে।

চতুর্থ কিস্তি ছাড় জুন পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে এবং তা ঠিক কি না- এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত আইএমএফের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে বর্তমানে দেশের চলতি হিসাব এবং আর্থিক হিসাবের ভারসাম্য পরিস্থিতি ভালো।

জানা গেছে, মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে না দেওয়া এবং কর-রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় বাংলাদেশের চলমান ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের জন্য পর্ষদের বৈঠক গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আরও এক মাস পিছিয়েছে আইএমএফ। বৈঠক আরও পিছিয়ে জুনে নিয়ে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়া। যদি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআর তাদের সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন করতে না পারে, তাহলে চতুর্থ কিস্তি আটকে যেতে পারে। এক্ষেত্রে পঞ্চম কিস্তির সঙ্গে মূল্যায়ন করে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড় করা হতে পারে। তবে সংস্কার বাস্তবায়ন হলে আগামী মার্চ মাসেই চতুর্থ কিস্তি ছাড় করবে আইএমএফ।

জানা গেছে, সরকার চেষ্টা করছে শর্ত পূরণ করতে না পারলেও যাতে ঋণের কিস্তি পাওয়া যায়। এই বিষয়ে আইএমেফের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঢাকার আবাসিক প্রতিনিধি জয়ন্ত দে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ঋণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, ঋণের কিস্তি প্রদানের আগে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের অনুমোদনের দরকার পড়ে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির যে পর্ষদ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়েছে। বৈঠকটি হবে আগামী ১২ মার্চ।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলোও বলছে, আইএমএফ ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি পেতে ১২টি শর্তের সবগুলোই পূরণের পথে থাকলেও এনবিআর আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কারে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে সাত কিস্তিতে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান। এর দুই দিন পরই ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে আসে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে ছাড় হয় ১১৫ কোটি ডলার।

তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্য আর বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। এ দফায়, অর্থাৎ চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। বাকিগুলো পাওয়া যাবে আরও তিন কিস্তিতে।

বাংলাদেশ অবশ্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির সঙ্গে একটি আলাদা প্যাকেজে সংস্থাটি থেকে আরও ৭৫ কোটি ডলার বাড়তি চেয়েছে। এর বিপরীতে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, বাংলাদেশ সেগুলোও পূরণের পথে রয়েছে বলে জানা গেছে।